শহর তখনও দিনের শেষ ঘুম ঘুমিয়ে নিচ্ছে। আর শহরের প্রান্তেই শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যস্ততা। গাছের ডালে টাঙানো ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে খাঁকি পোশাক পরে দাঁড়িয়ে এক বছর ৩০-এর যুবক। আর তাঁর সামনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই গোল হয়ে বসেছে পড়ুয়ারা। খাঁকি পোশাকটা অবশ্য পরের শিফটের কাজের জন্য। এরপরেই তো ছুটতে হবে থানায়। তারপর আইনি কাগজ ঘাঁটা আর অপরাধীর পিছনে ধাওয়া করা। হ্যাঁ, এভাবেই প্রতিদিন দুটি চরিত্রই সামলে চলেছেন বেঙ্গালুরুর সানতাপ্পা জাদেম্মানবর। এই লকডাউনে যে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী লেখাপড়ার সুযোগ হারিয়েছে, তাদের কয়েকজনকেও তো সেই স্বাদ পৌঁছে দিতে পারছেন তিনি।
সম্প্রতি লকডাউনের সময় থেকে বারবার উঠে আসছে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা। তাঁদের পরিবারের কথা। এমনকি ইন্টারনেট কানেকশনের অভাবে অসংখ্য পড়ুয়া যে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে, উঠে আসছে সে কথাও। আর এইসব খবরই বিচলিত করেছিল সানতাপ্পাকে। তাই নিজের কাঁধেই দায়িত্ব তুলে দিলেন। তাঁর নিজের কথায়, তিনিও দুই পরিযায়ী শ্রমিকের সন্তান। তাঁর অভিভাবকদের কাজের জন্য কাছে পাননি তিনি। তিনি জানেন পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার কীভাবে বাঁচে। তাই তিনি এগিয়ে না এলে কে আসবে?
প্রায় ৫ মাস হতে চলল, নিয়মিত এই স্কুলে অঙ্ক, বিজ্ঞান, এবং নীতিশিক্ষা দিয়ে আসছেন তিনি। পড়ুয়াদের আবার নানারকম নাম দিয়েছেন। কেউ মহাত্মা গান্ধী তো কেউ আম্বেদকর। সানতাপ্পা বিশ্বাস করেন, এঁরাই একদিন সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এরাই একদিন দেশের নেতা হয়ে উঠবে। তাঁর এই একনিষ্ঠ লড়াই-ই এই স্বপ্নকে সার্থক করে তুলুক।
Powered by Froala Editor