গ্রীষ্মকালে সাইবেরিয়ায় জন্ম হয় অ্যামর ফ্যালকন পাখির। আর শীত পড়তে শুরু করলেই তারা যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে। আর এই যাত্রার মাঝে একটা বড়ো সময় ভারতেও কাটিয়ে যায় তারা। মূলত নাগাল্যান্ড অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি অ্যামর ফ্যালকন আসে। তবে অবৈধ শিকারের কারণে একপ্রকার হারাতে বসেছিল এই পরিযায়ী পাখিটি। একের পর এক আইন প্রণয়ন করেও কোনো লাভ হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি দীর্ঘদিন। শেষ পর্যন্ত বিপন্ন পাখিদের বাঁচাতে এগিয়ে এলেন একদল যুবক। কর্পোরেট দুনিয়ার মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে পাখি সংরক্ষণের কাজ শুরু করলেন রামকি শ্রীনিবাসন (Ramki Sreenivasan)। বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুললেন ‘কনজার্ভেশন ইন্ডিয়া’ নামের একটি সংস্থা। বিগত ১৩ বছরের চেষ্টায় এখন নাগাল্যান্ডে (Nagaland) পরিযায়ী পাখি হত্যা বন্ধ করা গিয়েছে পুরোপুরি। শুধু তাই নয়, একসময় যে মৎস্যজীবীরা পাখি শিকার করতেন, এখন তাঁরাই সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন।
২০০৮ সালে গড়ে ওঠে কনজার্ভেশন ইন্ডিয়া। বেশ কয়েক বছর কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করার পর সেই বছর বেঙ্গালুরুর যুবক শ্রীনিবাসন ঠিক করেছিলেন, এবার পুরনো ভালোবাসার কাছে ফিরবেন তিনি। ছোটো থেকেই পাখি দেখা এবং পাখির ছবি তোলা তাঁর নেশা। ছবি তুলতে তুলতেই চলে আসেন নাগাল্যান্ডে। পাহাড়ি জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের দেখা পেলেন, ছবিও তুললেন। সেইসঙ্গে তাঁর লেন্সে ধরা পড়ল পাখি শিকারের দৃশ্যও। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, এক এক বছরে প্রায় ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ অ্যামর ফ্যালকন পাখি শিকার করেন নাগাল্যান্ডের মৎস্যজীবীরা। তবে এই পেশা খুব বেশি পুরনো নয়। মোটামুটি ২০০৫-০৬ সাল নাগাদ এই কাজ শুরু হয়। কিন্তু এই ২-৩ বছরের মধ্যেই বাস্তুতন্ত্রের যথেষ্ট ক্ষতি করে ফেলেছিলেন তাঁরা। শ্রীনিবাসন ঠিক করেন, পরিস্থিতি বদলাতেই হবে।
বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে অ্যামর ফ্যালকন ও অন্যান্য পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে একটি বিশদ পরিসংখ্যান তৈরি করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে এগিয়ে আসেন আরও ২ জন স্থানীয় যুবক এবং ২ জন পরিবেশকর্মী। সরকারি আধিকারিকদের কাছে পাঠানো হয় সেই পরিসংখ্যান। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থার কাছেও পাঠানো হয় রিপোর্ট। বিভিন্ন দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করার ফলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তবে প্রশাসনিক উদ্যোগে যে পুরোটা সম্ভব হবে না, সেটাও জানতে শ্রীনিবাসন। তাই নিজেরাই শুরু করলেন সচেতনতামূলক প্রচার উদ্যোগ। বিভিন্ন গ্রামের শিশুদের নিয়ে তৈরি করলেন ‘ফ্রেইন্ডস অফ ফ্যালকন’। শিশুরা নিজেদের বাড়িতে গিয়েই প্রথম সচেতনতা ছড়াতে থাকে। এভাবেই সচেতন হন বড়োরাও। দেখতে দেখতে গোটা রাজ্যজুড়ে ফ্যালকন শিকারের সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে। পাশাপাশি তাদের সুরক্ষার জন্য নানা ব্যবস্থা নেন মৎস্যজীবীরাই। বিলুপ্তির মুখ থেকে এভাবেই পরিযায়ী পাখিদের ফিরিয়ে আনলেন শ্রীনিবাসন।
Powered by Froala Editor