পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত— এই তিন শব্দের বন্ধনেই আবদ্ধ বিজ্ঞান। তত্ত্বের বাইরেও পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যার পঠনপাঠের জন্য আবশ্যিক। আর দৃষ্টিহীন ছাত্র-ছাত্রীরা? তাঁদের বিজ্ঞানপাঠের জন্য বিশেষ কোনো পরিকাঠামো কি আদৌ রয়েছে আমাদের এই দেশে? ফলে, বাধ্য হয়েই অধিকাংশ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেছে নিতে হয় আর্টস বা কমার্সের জগৎ। তবে এই সমস্ত প্রতিকূলতাকে হারিয়েই নজির গড়েছিলেন কর্ণাটকের (Karnataka) তরুণী। এবার তিনি পথ দেখাচ্ছেন দৃষ্টিহীনদের ছাত্র-ছাত্রীদের।
বিদ্যা ওয়াই আনন্দ (Vidya Y Anand)। জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন বিদ্যা। সৌভাগ্য হয়নি পৃথিবীর রূপ-রং-সৌন্দর্য দেখার। তবে প্রতিবন্ধকতার জন্য স্বপ্নের সঙ্গে কোনোরকম আপোস করেননি তিনি। লড়াইটা শুরু হয়েছিল একদম ছোটোবেলা থেকেই। বিদ্যা তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। দৃষ্টিহীনদের বিশেষ স্কুল ছেড়ে ভর্তি হয়েছিলেন সাধারণ স্কুলে। আর পাঁচজন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর মতো করেই শিক্ষার জগতে লড়াই করা ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য। তবে প্রতিবন্ধকতার জেরে তাল মিলিয়ে রাখতে যথেষ্ট কষ্ট করতে হয়েছে তাঁকে। বিশেষভাবে গণিত কিংবা বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলিতে পড়া বুঝতে বেশ সমস্যা হত তাঁর। বোর্ডের লেখা যে কিছুই দেখতে পেতেন না তিনি। নির্ভর করতে হত প্রাইভেট টিউটরের ওপর।
এই ঘটনাই যেন বাড়তি জেদ যোগায় তাঁকে। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য বিজ্ঞানকেই বেছে নেন বিদ্যা। কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়েই স্নাতকতা সম্পূর্ণ করেন তিনি। সেসময় কানাডার একটি প্রতিষ্ঠান সাহায্য করেছিল তাঁকে। জুম কলের মাধ্যমে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের পাঠ দেয় এই প্রতিষ্ঠান। তাঁদের থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বিদ্যা। ভেবেছিলেন একদিন তিনিও এভাবেই পাঠদান শুরু করবেন দৃষ্টিহীন তরুণ-তরুণীদের।
২০১৭ সাল বেঙ্গালুরু আইআইটি থেকে স্বর্ণপদক নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন বিদ্যা। তারপরই শুরু হয় স্বপ্নপূরণের লড়াই। বেঙ্গালুরু আইআইটির অধ্যাপক অমিত প্রকাশ এবং গবেষিকা সুপ্রিয়া দে-এর সাথে জোট বেঁধে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভিশন এমপাওয়ার’ সংস্থা।
বিগত কয়েক বছর এই অলাভজনক সংস্থাই পথ দেখাচ্ছে হাজার হাজার দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের। প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করছে স্টেম কোর্সে পড়াশোনা করার জন্য। ফেরাচ্ছেন সমাজের মূল স্রোতে। তাঁর স্থির বিশ্বাস, দৃষ্টিহীনদের জন্য দেশে বিজ্ঞানপাঠের বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে উঠলেই বদল আসতে পারে বর্তমান পরিস্থিতিতে। প্রশাসনকে যেন সেই পথটাই দেখাচ্ছেন বছর সাতাশের বিদ্যা আনন্দ…
Powered by Froala Editor