“ইচ্ছা ছিল বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করব। করোনা অতিমারী মিটলে ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতাল এবং আইসিসিআর-এ নাচের অনুষ্ঠান করব। কিন্তু এইসবের মধ্যেই আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লাম।” কথাগুলো বলতে বলতে এক অদ্ভুত কাতর অভিব্যক্তি ফুটে উঠছিল কোয়েল মল্লিকের গলার স্বরে। শারীরিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই অবশ্য তাঁর জীবনে নতুন নয়। ছাত্রাবস্থা থেকেই শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার।
“আমি তখন লেডি-ব্র্যাবোর্ন কলেজে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তখনই, ১৯৯৯ সালে ধরা পড়ে হাড়ের ক্যানসার।” বলছিলেন কোয়েল। এক লহমায় বদলে গেল জীবন। ছোট থেকেই নাচকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছেন অনেক। ভারতনাট্যম ছিল তাঁর সাধনা। কিন্তু বোন-ক্যানসার প্রথমেই আক্রমণ করেছে পায়ে। শেষ পর্যন্ত চেন্নাই শহরে গিয়ে অপারেশন করালেন তিনি। পায়ে প্রস্থেটিক বসানো হল। ফিরে এসে আবারও শুরু হল পড়াশোনা। সেইসঙ্গে নাচের চর্চা। তাঁর নাচের জন্য যেমন প্রশংসা পেয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে, তেমনই পড়াশোনাতেও প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। স্নাতক স্তরে কলেজে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। পরবর্তী স্তরের পড়াশোনার জন্য পেয়েছেন জাতীয় স্কলারশিপও। কিন্তু দেখতে দেখতে তাঁর জীবনে আবারও সংকট ঘনিয়ে এল।
স্নাতোকত্তর স্তরের পড়াশোনা শেষ করে এমফিল-এর কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন কোয়েল। আর সেইসঙ্গে জয়পুরিয়া কলেজে অধ্যাপনার কাজও শুরু করেন। একদিকে নিজের পড়াশোনার জন্য ঘুরতে হত নানা লাইব্রেরিতে, অন্যদিকে কলেজের নিয়মিত ক্লাস নেওয়া। সিঁড়ি ভেঙে ক্লাসরুমে পৌঁছে যাওয়া। এই ব্যস্ত জীবনেই হঠাৎ ক্লাস নিতে নিতে একদিন শুরু হল পায়ে ব্যথা। পরীক্ষায় ধরা পড়ল, পায়ের প্রস্থেটিক হাড়টি ক্ষয়ে গিয়েছে বেশি হাঁটাচলার ফলে। শুধু তাই নয়, সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ইনফেকশন। তার মধ্যেই এমফিল কোর্সের পরীক্ষাও উপস্থিত। এরপর ২০১২ সালে আবারও অপারেশন করাতে হয়। নতুন করে প্রস্থেটিক বসানো হয় হাড়ে।
দুবারের অপারেশনে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছিল কোয়েলের পরিবার। রোজগারের দায়িত্বও যে এখন তাঁর উপরেই। কোনোরকমে সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছিলেন কোয়েল। সেইসঙ্গে নতুন করে নাচ শুরু করলেন। এর আগেও ছাত্র-যুব উৎসব থেকে সঙ্গীত অ্যাকাডেমি, নানা মঞ্চে নাচ-গানে অংশ নিয়েছেন তিনি। অনুষ্ঠান করেছেন চেন্নাই শহরেও। পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠান সঞ্চালনার কাজও করেছেন তিনি। ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনিক্যাল স্টাডিজ থেকে সঞ্চালনার উপর আলাদা কোর্সও করেছেন। এটিএন ওয়ার্ল্ড টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি সঞ্চালনা করেছেন রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুলিশের নানা অনুষ্ঠান। ওয়াশিংটন রেডিও থেকে সম্প্রচারিত হয়েছে তাঁর গান।
আরও পড়ুন
অকারণ সিটি-স্ক্যানে হাতছানি ক্যানসারের!
কিন্তু জীবনে আরও বাধা অপেক্ষা করে ছিল তাঁর জন্য। ২০১৭ সালে ধরা পড়ল তাঁর ব্রেস্ট ক্যানসার। এদিকে চিকিৎসার খরচটুকুও তখন হাতে নেই। কোনোরকমে অপারেশন করালেন। তবুও পুরোপুরি সুস্থ হলেন না। “কিছুই তো করতে পারলাম না জীবনে। বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েছি।” বলছিলেন তিনি। এই কিছু না পারার মধ্যেও অনেককিছুই করেছেন। সুস্থ হয়ে উঠতে পারলে আরও অনেককিছুই করতে পারবেন। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই কিছুই। অথচ ডাক্তাররা বলছেন অন্তত ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লাগবে প্রাথমিক পদক্ষেপের জন্যই। তাই সাধারণ মানুষের কাছেই আর্জি জানাচ্ছেন কোয়েল। প্রতিভাবান একজন শিল্পীর জীবন বাঁচাতে পারে প্রত্যেকের অল্প অল্প সাহায্যই। আপনিও আপনার সাধ্যমতো সাহায্য পাঠাতে পারেন তাঁকে, নিম্নলিখিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে…
আরও পড়ুন
মাত্র দুটি ড্রাগের মিলিত প্রয়োগেই সেরে উঠবে ফুসফুসের ক্যানসার, যুগান্তকারী আবিষ্কার
Name : Ms. Koyel Mallick
Bank name : State Bank of India,
Branch : Howrah P.B. No. 19, 9, G.T. Road (South)
Branch code : 91
Account No : 35152402583
IFSC : SBIN0000091
Google Pay number : 8017268857
আরও পড়ুন
আক্রান্তদের জন্য তহবিল গড়তে সাইকেলে বিশ্বভ্রমণ ক্যানসার-জয়ীর
Powered by Froala Editor