নতুন বুট কেনা তো দূরের কথা। ছিল না পুরনো জুতো সারাইয়ের সামর্থ্যও। তবু ছোটো থেকেই ঈশ্বরজ্ঞানে পুজো করে আসা ফুটবলকে। প্রতিদিন একনিষ্ঠভাবেই ঘাম ঝরানো সবুজ মাঠে। আর এই পরিশ্রমেরই দাম মিলল এবার। অবশেষে সন্তুষ্ট হলেন দেবতা। বাংলা থেকেই এবার স্বপ্নের উড়ান বায়ার্ন মিউনিখে। হ্যাঁ, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবল ক্লাবে এবার সোনা ঝরানোর সুযোগ পেলেন ১৭ বছর বয়সি তরুণ বাঙালি ফুটবলার শুভ পাল।
কিন্তু কীভাবে ১২১ বছরের পুরনো এই বিশ্ববন্দিত ফুটবল ক্লাবে খেলার সুযোগ পেলেন শুভ? বছর খানেক আগের কথা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্ব স্কোয়াড গড়ার লক্ষ্যেই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল প্রদাবপ্রতিম জার্মান ক্লাবটি। লক্ষ্য, প্রতিভাবান তরুণ তারকাদের তুলে আনা আন্তর্জাতিক মঞ্চে। তরুণ ফুটবলারদের মনোনয়ন চেয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছিল জার্মান ক্লাবটি। জমা দিতে বলা হয়েছিল ব্যক্তিগত ফুটবল স্কিল এবং খেলার সংক্ষিপ্ত কিছু ভিডিও। তার ভিত্তিতে বিশ্বের ৬৪টি দেশের ৬৫৪ জন ফুটবলারকে বেছে নিয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ। তারপর ট্রায়ালের মাধ্যমে মাত্র ১৫ জন সুযোগ পায় বায়ার্নের মূল দলে খেলার। সেই চূড়ান্ত স্কোয়াডে খেলারই যোগ্যতা অর্জন করে নিল সালকিয়ার তরুণ।
সালকিয়ায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারেই বেড়ে ওঠা শুভ-র। বাংলার প্রাক্তন কোচ তপন কর্মকারের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল পেশাগত ফুটবল জীবন। তারপরই তরুণ ফুটবলারকে আবিষ্কার করেন মোহনবাগানের প্রাক্তন তারকা তথা নাইজেরিয়ান ফুটবলার চিমা ওকেরি। তাঁর কাছেই পরবর্তী সময়ে ফুটবল অনুশীলন করেছেন শুভ।
বছর তিনেক আগে বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে দিল্লিতে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন এই তরুণ তারকা। সুদেভা এফসি-র হয়ে বিগত তিন বছরই প্রথম স্কোয়াডে থেকে মাঠ কাঁপিয়েছেন তিনি। গত বছর খেলেছেন সিনিয়র আইলিগে। ২০১৯-২০ এর মরশুমে ১১ ম্যাচে করেছেন ১৪টি গোল। পাশাপাশি অনূর্ধ্ব ১৫, ১৬ এবং ১৭-র জাতীয় দলেও ভরসাযোগ্য খেলোয়াড় ছিলেন শুভ। উইং-এ তাঁর শাণিত আক্রমণ ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছিল ফুটবলমহলের। এবার তার সুবাদেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পা রাখা আন্তর্জাতিক ফুটবল দুনিয়ায়।
আরও পড়ুন
মাঠেই অচৈতন্য ড্যানিশ তারকা এরিকসন, আতঙ্কের প্রহর ফুটবলমহলে
চলতি মাসেই দিল্লি থেকে মেক্সিকোয় উড়ান দেবেন শুভ। ২৬ জুন থেকে রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পে সেখানে বায়ার্নের হয়ে খেলবেন ৩টি প্রীতি ম্যাচ। হবে দু’সপ্তাহের অনুশীলনও। তারপর সেখান থেকে জার্মানির মিউনিখ শহর। স্বপ্নের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনা। যে স্টেডিয়ামে ফুটবলের ফুল ফোটান টমাস মুলার, রবার্ট লিওনডোস্কি, জোসুয়া কিমিচ, আলাবা, ম্যানুয়াল নয়ারের মতো বিশ্বসেরা ফুটবলাররা। সেই স্টেডিয়ামই এবার হয়ে উঠবে শুভ-র ফুটবল উপাসনার মন্দির। ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গে ৬২.৫ লক্ষ টাকার চুক্তি করেছে জার্মান ক্লাবটি। ধারাবাহিক পারফর্মেন্স ধরে রাখতে পারলে পরের মরশুমে বায়ার্নের মূল দলেও সুযোগ আসতে পারে তাঁর।
আরও পড়ুন
মিস করেননি একটিও ম্যাচ, সদ্যপ্রয়াত দম্পতিকে বিরল সম্মাননা তুর্কির ফুটবল ক্লাবের
এর আগে মহম্মদ সালিম, সুব্রত পাল, অনুপম সরকারের মতো বাঙালি ফুটবলার সুযোগ পেয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলার। তবে বিগত পাঁচ বছরে বাংলা থেকে আন্তর্জতিক মঞ্চে ফুটবল খেলার সুযোগ পাননি তেমন কেউ। এবার সেই ঘাটতিটাকেই যেন পূরণ করে দিলেন শুভ। যা নিঃসন্দেহে বাংলা তথা গোটা ভারতের কাছেই গর্বের বিষয়। সালকিয়ার এই তরুণ তারকাকে ঘিরেই এখন উন্মাদনার প্রহর গুনছে বাঙালি ফুটবলপ্রেমীরা…
আরও পড়ুন
ফুটবলের গ্যাংস্টার ও এক অন্ধকার শহরের কিসসা
Powered by Froala Editor