সাইবার হেনস্থা-র বিরুদ্ধে লড়াই, শিশু শান্তি পুরস্কার জয়ী বাঙালি কিশোর

ইন্টারনেটের দুনিয়ায় নানা অবাঞ্ছিত মানুষের উত্যক্ত ব্যবহার সহ্য করতে হয় অনেককেই। কারোর কারোর জীবনে তা গভীর প্রভাব ফেলে যায়। ঠিক এমনিভাবে ১৫ বছরের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল সাইবার-বুলিং-এর কারণে। এই ঘটনা সহ্য করতে পারেনি প্রায় সমবয়সি সাদাত। সমাজ এখনও ছোটদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনতে প্রস্তুত নয়। তাই তাকেই কিছু একটা করতে হবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তৈরি করে ফেলল আস্ত একটা মোবাইল অ্যাপ। ‘সাইবার টিনস’ নামের এই অ্যাপের সাহায্যেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারবে ছোটোরা। তাদের খারাপ অভিজ্ঞতার কথাও জানাতে পারবে। আর এই অ্যাপই সাদাতকে পৌঁছে দিল সুদূর নরওয়েতে। এবারের চিল্ড্রেনস পিস প্রাইজের প্রাপক বাংলাদেশের ১৭ বছরের কিশোর সাদাত।

নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে সাদাতের হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন ইউসুফ মালালা। একসময় যে পুরস্কার তিনি নিজে পেয়েছিলেন। আর গতবছর এই পুরস্কার উঠেছিল গ্রেটা থানবার্গের হাতে। এবার তার দাবিদার বাংলাদেশের সাদাত। সাইবার ক্রাইমের জগত থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টাই তাকে অনন্য করে তুলেছে। নড়াইল জেলায় একটি দলও গড়ে তুলেছে সাদাত। তারা নানা স্কুলে ঘুরে ঘুরে সচেতনতামূলক প্রচার চালায়। আর সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নড়াইল পুলিশও। মাত্র কয়েক মাসে ৬০টির বেশি মামলা শুরু হয়েছে। আর এর মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি শিশু-কিশোর-কিশোরীকে যুক্ত করেছে ‘সাইবার টিনস’ অ্যাপ।

পুরস্কার পাওয়ার লড়াইটা কিন্তু সহজ ছিল না। ৪২টি দেশ থেকে ১৪২ জনের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। সবাইকে টপকে পুরস্কার পেল এক বঙ্গসন্তান। সাদাত বলে, এক প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ ছেলে হয়ে সে যদি এই লড়াইটা লড়তে পারে, তাহলে সকলে চাইলে নিশ্চই পরিবর্তন সম্ভব। আগামীদিনে আরও বড়ো স্তরে কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তার। আর এই পুরস্কারমূল্যের ১ লক্ষ ইউরো নিজের অ্যাপের কাজেই খরচ করবে সে। হয়তো মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আগে সাদাতের মতো কেউ কেউ হাত বাড়িয়ে দেবে সাইবার বুলিং-এর শিকার শিশুদের দিকে।

Powered by Froala Editor