১০০ এমনই একটা সংখ্যা, যা শুনতে খুব দূরের লাগে। তা সে বয়সই হোক বা অন্যকিছু। প্রায় অধরা একটা হাতছানি, যা পাওয়ার ইচ্ছে ছুটিয়ে বেড়ায় অনেককেই। অনেকে আবার ছোটেনও না। স্বাভাবিকভাবেই ১০০ এসে হাজির হয় তাঁদের কাছে। ভাবুন তো, এক শতাব্দী জীবিত রইলেন যাঁরা, বা ছিলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতার কাছে কি নিজেকে শিশু মনে হয় না? তাঁরাই স্বয়ং ইতিহাস। কিংবদন্তি। শতাব্দী-পেরনো এক বিশাল অশ্বত্থগাছ তাঁরা।
বাঙালিদের মধ্যেও, ১০০ বছর জীবিত ছিলেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তবে তাঁদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কারা, তা গুনতে বসলে আঙুলের কড় হয়তো বেশিদূর এগোবে না। আসুন, দেখে নিই –
১। নীরদচন্দ্র চৌধুরী
১৯৯৭ সালে শতবর্ষ পূরণ করেন লেখক ও চিন্তাবিদ নীরদচন্দ্র চৌধুরী। ১৮৯৭ সালের ২৩ নভেম্বর কিশোরগঞ্জে জন্ম তাঁর। কলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে, শুরু হয় তাঁর বিচিত্র কর্মজীবন। ব্রিটিশ সরকারের কেরানি, পরবর্তীকালে সাংবাদিক ও সম্পাদক, শরৎচন্দ্র বসুর ব্যক্তিগত সচিব, অল ইন্ডিয়া রেডিও-র রাজনৈতিক বিশ্লেষক – সবই পালন করেছেন দায়িত্বে সঙ্গে। পাশাপাশি চলছিল লেখালিখিও। ১৯৭০ সালে তিনি পাড়ি জমান ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে। সেখানেই ১৯৯৯ সালে মৃত্যু হয় এই বাঙালির।
২। লীলা মজুমদার
তাঁর সম্পর্কে আর আলাদা করে কীই বা বলার থাকতে পারে! শিশুসাহিত্যিক লীলা মজুমদার শতবর্ষে পদার্পণ করেন ২০০৭ সালে। ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্ম তাঁর। তিনি ছিলেন সম্পর্কে সত্যজিৎ রায়ের পিসি। সুকুমার রায়ের ‘সন্দেশ’ পত্রিকা ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ ফিরিয়ে আনলে, ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত সাম্মানিক সহ-সম্পাদক হিসেবে সন্দেশ-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন লীলা মজুমদার। শেষ কয়েকটা বছর লোকজনকে চিনতে পারতেন না লীলা। শতবর্ষে পা দেওয়ার মাসকয়েক বাদে, ২০০৭ সালেরই এপ্রিল মাসে মারা যান তিনি।
৩। মনোহর আইচ
‘বিশ্বশ্রী’ মনোহর আইচকে চেনেন না এমন বাঙালি বোধহয় খুব কমই আছেন। ১৯১২ সালের ১৭ মার্চ কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে যেতেন ‘মিস্টার হারকিউলিস’ খেতাব। ১৯৫২ সালে ‘মিস্টার ইউনিভার্স’ও হন এই বঙ্গসন্তান। ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রদর্শনী করেছেন তিনি। শতবর্ষ পেরিয়েও তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাপন টাল খায়নি বিশেষ। ২০১২ সালে, ১০০ বছর পূর্ণ করার পর, স্বাস্থ্যবান মনোহর আশা করেছিলেন, আরও ২৫ বছর বাঁচবেন তিনি। তা অবশ্য আর হয়নি। ২০১৬ সালে, ১০৪ বছরে মারা যান এই কিংবদন্তি বডিবিল্ডার।
৪। অমলাশঙ্কর
১৯১৯ সালের ২৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী। ১৯৩১ সালে প্যারিসে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় উদয়শঙ্করের। একসঙ্গে নাচ পরিবেশন করেন তাঁরা। পরবর্তীকালে এই আলাপ গড়ায় বিবাহে। দেশ-বিদেশে ভারতীয় নৃত্য পরিবেশন করেছেন এই দম্পতি। তাঁদের কন্যা মমতাশঙ্কর ও পুত্রবধূ তনুশ্রীশঙ্করও নৃত্যকলায় পারদর্শী। ২০১২ অব্দিও সক্রিয় ছিলেন অমলাশঙ্কর। চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৯-এ শতবর্ষ পূর্ণ করলেন এই কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী। ১০০-ছোঁয়া খ্যাতিমানদের মধ্যে, বর্তমানে একমাত্র জীবিত তিনিই।
এছাড়াও মনে উঁকি দেয় লালন সাঁই-এর কথা। হ্যাঁ, লালন ফকির। তাঁর জন্মসন ১৭৭২ না ১৭৭৪ – এ-নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে মৃত্যুর সাল-তারিখ সম্পর্কে সকলেই নিঃসন্দেহ – ১৭ অক্টোবর, ১৮৯০। অর্থাৎ, ১১৮ কিংবা ১১৬ বছর বেঁচেছিলেন লালন। কিন্তু তাঁর জন্মসনের নির্দিষ্ট প্রমাণপত্র না থাকায়, তাঁকে শতায়ুদের তালিকাভুক্ত করতে চান না অনেকেই। আমরা করলাম। অচিন পাখি যিনি, তাঁর যাওয়া-আসা কি বার্থ সার্টিফিকেট দিয়ে ধরা যায়!