পাকিস্তানের বুকে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড, আজও উজ্জ্বল তার গরিমা

৫২-র ভাষা আন্দোলন বাঙালির হৃদয়ে এখনও উজ্জ্বল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্থান সরকার উর্দুভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করে। তাতে বাংলাভাষী সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভের জন্ম নিয়েছিল, ২১শে দিনটি সেই প্রতিবাদেরই উদাহরণ। চাপের মুখে পড়ে সেদিন পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু সেদিন খোদ পাকিস্তানেই, পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষুর আড়ালে টিকে ছিল একটি বাংলা সাইনবোর্ড।

আরও পড়ুন
একসময় বাংলা শাসন করত যেসব ভয়ঙ্কর ডাকাত

১৮৮২ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত গোলরা শরীফ রেল স্টেশন। প্রাচীন এই রেলস্টেশনের ইতিহাস কম আকর্ষণীয় নয়। এর সঙ্গে মিশে আছে দেশভাগের ট্র্যাজেডিও। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া ভারতবর্ষে তখন জাতিগত সংঘর্ষ চরমে। তখন ভারত ছেড়ে মুসলিমরা যাচ্ছেন পাকিস্তানে। আর হিন্দু, শিখ পরিবারেরা পাকিস্তান থেকে পাড়ি জমাচ্ছেন ভারতে। যাত্রার সময় অনেকেই ট্রেন বদল করতেন গোলরা শরীফ জংশনে।

একসময় চা-পানের উপকারিতা বোঝাতে এবং চায়ের প্রচারের জন্য বিভিন্ন স্টেশনে সাইনবোর্ড লাগাত ব্রিটিশরা। তখন সবে ভারতে জনপ্রিয় হচ্ছে চা। অবিভক্ত ভারতের অন্যান্য স্টেশনের মতো গোলরা শরীফেও ব্রিটিশরা টাঙিয়েছিল একটি সাইনবোর্ড। তাতে হিন্দি, উর্দু, ইংরাজি, পাঞ্জাবি বাংলায় লেখা চায়ের দাম ও চা বানানোর পদ্ধতি। জমজমাট স্টেশন তখন চায়ের গন্ধে ম ম। ছিল হকারদের চির পরিচিত ডাক 'চায়ে গরম চায়ে গরম।' স্টেশনের পাশের একটি বট গাছের কাণ্ডে লাগানো হয়েছিল চা-সম্বন্ধীয় এই সাইনবোর্ড।

স্টেশন তৈরির সময়, তৈরি হয়েছিল ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যে তৈরি একটি বিল্ডিং। ২০০৩ সালে বিল্ডিংটি গোলরা শরীফ রেলওয়ে যাদুঘর বা রেলওয়ে হেরিটেজ মিউজিয়ামে পরিণত হয়। সেই মিউজিয়ামেই স্থানান্তরিত করা হয় সাইনবোর্ডটিকে। আজও সেখানে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে সাইনবোর্ডটি। আমাদের মাতৃভাষা সেখানে উজ্জ্বল...

More From Author See More