শৌর্য রায়ের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? বছর আটেক আগের কথা। সদ্য মাধ্যমিক গণ্ডি পেরনো বাঙালি কিশোর সাড়া ফেলে দিয়েছিল সারা পৃথিবীতে। কলকাতার ১৬ বছরের খুদে বিজ্ঞানী জট ছাড়িয়েছিল স্যর আইজ্যাক নিউটনের তৈরি করা ৩৫০ বছরের পুরনো এক ধাঁধার। তবে বাবা-মায়ের সঙ্গে জার্মানিতেই বসবাস শৌর্যের। মাস দুয়েক আগে জার্মানি থেকেই উল্লেখযোগ্য একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর।
গত নভেম্বরে এপিএস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এ-গবেষণাপত্র। গবেষণায় তাঁর সঙ্গেই জড়িত ছিলেন আরও দুই বিজ্ঞানী ম্যাথিয়াস ভোজটা এবং লুকাস জানসেন। দু’মাত্রার সেমিমেটালিক পর্যায়ের কোয়ান্টাম সংকট বিন্দু’র ওপরেই ছিল এই গবেষণা। ফার্মি নোডের দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান করে বর্ণালির ব্যান্ড গ্যাপ নির্ভুলভাবে পরিমাণ করার পদ্ধতিকেই সামনে এনেছে শৌর্যের করা সমাধান।
তবে ঠিক যতটা সরল বলে মনে হচ্ছে তেমনটা একেবারেই নয় বিষয়টি। সংকট বিন্দু শুধুমাত্র শক্তিস্তরের ওপরেই নির্ভর করে না। বরং বিশৃঙ্খলতা সূচকের সঙ্গেও পরিবর্তিত হতে থাকে তা। অন্যদিকে সংবেদনশীলতা নির্ভর করে শক্তি অপসারণের ওপরে। দ্বিমাত্রিক ফার্মিওনিক কোয়ান্টাম ক্রিটিকাল পয়েন্টের সমাধানে এর আগে পৌঁছাতে পারেনি কেউ-ই। বলাই বাহুল্য, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় নতুন দিশা দেখাল শৌর্য এবং তাঁর সহকারী গবেষকদের গবেষণা।
তবে এই ধরণের কঠিন সমীকরণের সমাধানে বরাবরই আকর্ষিত করত তাঁকে। বাবা পেশাগতভাবে ছিলেন একজন প্রকৌশলী। জটিল গণিতের ক্ষেত্রে নেমে পড়া তাঁর হাত ধরেই। কঠিন অঙ্কের সমাধান খুঁজে বার করার মধ্যেও যে অপরিসীম আনন্দ আছে তারপরেই টের পান শৌর্য। সমাধান অযোগ্য সমীকরণদের নতুন করে তাই শৌর্য ভালোবেসে ফেলেছিলেন ছোটো বয়সেই।
১২ বছর বয়সে তেমনভাবেই হাতে এসেছিল নিউটনের তৈরি করা একটি ধাঁধা। আমরা সকলেই জানি একটি বস্তুকে পৃথিবীর সমান্তরালে ছুঁড়ে দিলে খানিকক্ষণ পরে তা মাটিতে এসে পড়ে। কিন্তু কত বেগে ছুঁড়লে বস্তুটি পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে এসে প্রাথমিক বিন্দুতেই পড়বে? এমনটাই ছিল নিউটনের সেই ধাঁধা। নিউটন নিজেও সমাধান করতে পারেননি। সমাধান খুঁজে পাননি তাঁর পরের সাড়ে তিন শতকের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরাও।
যদিও কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের দৌলতে সে সমাধান মিলেছিল বটে শূন্যের দশকেই। তবে তা ছিল অত্যন্ত জটিল। শৌর্যের সময় লেগেছিল বছর চারেক। তারপর খাতায় কলমে সেই ধাঁধার সমাধান বার করে ফেলেছিল ষোড়শবর্ষীয় কিশোর। সেই সমাধানের সঙ্গে মিশেছিল এক নীরব প্রত্যুত্তরও।
আরও পড়ুন
ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণায় আন্তর্জাতিক সম্মান বাঙালি বিজ্ঞানীর
সদ্য কলকাতা থেকে জার্মানিতে পাড়ি দেওয়া তখন। জার্মান ভাষায় তখনও সড়গড় হয়ে ওঠা হয়নি। শিক্ষককে নিউটনের সমীকরণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করায় বেশ দম্ভের সঙ্গেই তিনি জানিয়েছিলেন সম্ভব নয় এর সমাধান নির্ণয়। তাঁর পক্ষে তো নয়ই। কিন্তু কে-ই বা জানত বাঙালি কিশোরই নিষ্পত্তি করবে রহস্যের?
আট বছর পরে তেমনই আরও এক রহস্যের নিষ্পত্তিও করলেন শৌর্যই। এখনও বিজ্ঞানের জগতে রয়েছে হাজার হাজার সম্পৃক্ত সমীকরণ। যার পর্দা সরিয়ে অপরপ্রান্তে উঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই কোনো। গণিত আর পদার্থবিদ্যার ভালোবাসার ওপর নির্ভর করে সেইসব অজানা উত্তরও যে সামনে আনবেন এই তরুণ বাঙালি গবেষক, সে ব্যাপারে আশাবাদী হতে ক্ষতি কি?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পৃথিবীর ইতিহাসে ‘বৃহত্তম’ পাখির সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা