ভাইরাস ছড়াতে পারে কৃত্রিম আলোও, জানাচ্ছে বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণা

ভাইরোলজিস্টরা তো বটেই, পৃথিবীর সমস্ত সাধারণ মানুষও এখন উন্মুখ হয়ে আছেন করোনা ভাইরাসের আক্রমণের প্রকৃত কারণ জানতে। ঠিক কী কারণে বাদুড়ের শরীর থেকে এই ভাইরাস এসে আক্রমণ করল মানুষকে? না, এর সঠিক কোনো উত্তর জানা না থাকলেও পরিবেশ দূষণকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সেই গবেষণায় সম্প্রতি অন্য একটি দিক দেখালেন এক বাঙালি বিজ্ঞানী। সেইসঙ্গে পরিবেশ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রেও আলোক-দূষণের প্রভাবের কথা বলছেন তিনি।

বর্তমানে আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অসমঞ্জ চট্টরাজ তাঁর গবেষণা শুরু করেন মণিপুরের ইম্ফল শহরে। সেখানে ইনস্টিটিউট ফর বায়ো–রিসোর্সেস অ্যান্ড সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট (ডিবিটি)-র পরীক্ষাগারে নানা প্রাণীর উপর কৃত্রিম আলোর প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। তখনই প্রথম দেখান কীভাবে জেব্রা ফিশকে একটানা কৃত্রিম আলোয় রেখে দিলে তার ডিম্বাশয়ে টিউমার তৈরি হচ্ছে। শুধু জেব্রা ফিশই নয়, সমস্ত প্রাণীর জৈব ঘড়ির উপরেই এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বলে জানাচ্ছেন তিনি। আর সবথেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বাদুর বা পেঁচার মতো নিশাচর প্রাণীদের। ফলে তাদের শরীরে বাসা বাঁধা ভাইরাসও অন্য পোষক শরীর খুঁজে নিচ্ছে।

দেশবিদেশের প্রায় ১৫০টি গবেষণাপত্র পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন অসমঞ্জ চট্টরাজ এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের লেখা মূল্যায়নপত্রটি সম্প্রতি ‘ফ্রন্টেয়ার্স ইন এন্ডোক্রাইনোলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অসমঞ্জ বাবুর কথায়, “এই গবেষণা যদি কৃত্রিম আলোকে দূষক পদার্থ হিসাবে চিনতে সাহায্য করে, তাহলেই প্রকৃত সাফল্য আসবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, “ফ্রান্স সহ কয়েকটি দেশে কৃত্রিম আলোকে দূষক বলে চিহ্নিত করার কথা উঠলেও আজ পর্যন্ত কোনো দেশেই আলোক-দূষণের কথা স্বীকার করা হয়নি। কিন্তু বিশেষ করে নীল এলইডি আলো শরীরে যথেষ্ট ক্ষতি করে।” তিনি জানিয়েছেন আমাদের পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন জৈব ঘড়িকে সচল রাখতে সাহায্য করে। কৃত্রিম আলোর প্রভাবে এই হরমোনের প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। কার্বন যেমন আমাদের শ্বাসযন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনই আলোর প্রভাবেও হরমোনের ক্ষরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার প্রভাব পড়ে প্রতিটা প্রাণীর শরীরে।

পরিবেশ দূষণের নানা প্রকরণের মধ্যে কৃত্রিম আলোও একটা। অথচ তাকে বাদ দিয়ে বেঁচে থাকা আজ সত্যিই অসম্ভব। কিন্তু তার ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ঠিক যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় বাকি সব দূষকদের। কিন্তু এর জন্য সবার আগে দরকার আলোকে দূষক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া। অসমঞ্জবাবুর গবেষণা সেই কাজে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, সেকথা বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুন
পেরিয়ে আসা ৬ মাস, মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইতে কি আদৌ এগোচ্ছি আমরা?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ইহুদি-নিধন তরান্বিত করছিল মহামারী, থামালেন নাৎসি ক্যাম্পে বন্দি চিকিৎসকরাই