“যার এফেক্ট থাকবে তার সাইড-এফেক্ট থাকবেই। আমাদের শুধু দেখতে হবে কোন পদ্ধতিতে প্রতিষেধক তৈরি করলে তা মানবদেহে সফলভাবে কার্যকর হবে।” আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ডঃ সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায় এমনটাই বললেন তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণা নিয়ে। সারা পৃথিবীতে যখন অন্যতম আলোচনার বিষয় করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক, তখন আসানসোলে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং গবেষকরা এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। আর সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন জার্নাল ‘জার্নাল অফ মেডিক্যাল ভাইরোলজি’-তে।
কী আছে এই গবেষণাপত্রে? ডঃ সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায় এবং বিভাগের স্নাতোকত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অভিজ্ঞান চৌধুরী দেখিয়েছেন ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থাগুলি যে পথে প্রতিষেধক তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে মানুষের শরীরে এই প্রতিষেধক কার্যকর হবে। ডঃ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের ফুসফুসে থাকে টিএলআর নামে একটি প্রোটিন। এই প্রোটিনই ভাইরাসকে চিনে নেয়। আমরা দেখাতে পেরেছি, করোনা ভাইরাসের এম-আরএনএ শরীরে গেলেই টিএলআর তাকে চিনে ফেলতে পারছে। অর্থাৎ তখন শরীরে অনাক্রম্যতা গড়ে উঠছে।” অর্থাৎ এই গবেষণার ফলে শুধু এটুকুই বলা সম্ভব, কোন পদ্ধতিতে প্রতিষেধক তৈরি করা যেতে পারে। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ভ্যাকসিনকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নন গবেষকরা। তার জন্য যে আর্দ্র-পরীক্ষা প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারগুলি বন্ধ থাকায় এখন তা সম্ভব নয়।
জার্নালটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে
এই গবেষণায় সাহায্য নেওয়া হয়েছে বায়ো-ইনফরমেটিক্স টেকনোলজির। এর আগেই করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় একই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাজী নজরুল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখিয়েছিলেন, করোনা ভাইরাসের জন্ম হয়েছে বাদুড়ের শরীরেই। পরীক্ষাগারে সৃষ্টি নয় এই ভাইরাস। সেই গবেষণাপত্রও একই জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। ডঃ মুখোপাধ্যায় আশাবাদী যে সেই গবেষণার মতো এবারেও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের ভাবনার পথ দেখাতে পারবে তাঁদের গবেষণা।
আরও পড়ুন
করোনার প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি, আন্তর্জাতিক সম্মান বঙ্গতনয়ার
অবশ্য এর মধ্যেই করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতিকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে। এমনকি নতুন করে প্রতিষেধক তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে কিনা, এমন সংশয়ও দেখা দিয়েছে অনেকের মনে। “এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসের পিছনে না ছুটে নিজেদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে চাঙ্গা রাখার কথাই ভাবা উচিৎ। আর অবশ্যই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং প্রয়োজনমতো পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।” বলছেন ডঃ মুখোপাধ্যায়। আসলে তাঁর মতে, “এত বড়ো একটা অতিমারীতে সকলের জন্য প্রতিষেধক তৈরি করতেও তো বিপুল সময় দরকার।” তবে প্রতিষেধক তৈরি হতে সময় লাগলেও তার জন্য সঠিক পথ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ এই মহামারীই সভ্যতার শেষ নয়। এটুকুই আশার আলো দেখাতে পারে ডঃ মুখোপাধ্যায় এবং অভিজ্ঞান চৌধুরীর গবেষণা।
আরও পড়ুন
আগামী বছরের শুরুতেই করোনা প্রতিষেধক আনতে চলেছে ভারতীয় সংস্থা প্যানাসিয়া বায়োটেক
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ভারতেই তৈরি হল করোনার প্রতিষেধক, অপেক্ষা শুধু চূড়ান্ত ফলাফলের