সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে খানিকটা তুলো। সামান্য তুলো আর কীই বা করতে পারে? কিন্তু যদি বলা হয় এই তুলোই দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে পারে সমুদ্রকে! অবাক করা এই আবিষ্কারের পিছনে রয়েছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী। ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী শুভেন্দু রায়চৌধুরীর সঙ্গে এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন মালদহ নিবাসী অতনু ঝাঁ। আপাতত পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ শেষ। মঞ্জুর হয়েছে পেটেন্টের আবেদনও। এখন বাকি কিছু নিয়মকানুনের পালা। তারপরেই বাণিজ্যিকভাবে এই নতুন ধরণের তুলোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে।
সমুদ্র দূষণের সবচেয়ে প্রাচীন কারণটি অবশ্যই তেল। তৈলবাহী জাহাজ থেকে শুরু করে কলকারখানার অশোধিত তেল মেশে সমুদ্রে। গত এক দশকে প্রতি বছর গড়ে ২০০ মিলিয়ন লিটার অশোধিত তেল মিশেছে সমুদ্রে। জলস্তরের উপর এই তেলের আস্তরণ বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি করে। এর থেকে মুক্তির উপায় সমস্ত তেল অপসারণ করা। কিন্তু কীভাবে সহজে করা যায় সেই কাজ? মুম্বাইয়ের ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টারের গবেষণাগারে বসে সেই পরিকল্পনাই করছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী শুভেন্দু রায়চৌধুরী। সাধারণ তুলো দিয়ে যে কোনো তরল পদার্থই অপসারণ করা সম্ভব। তাই শুভেন্দুবাবু ভাবছিলেন এমন এক তুলোর কথা, যা জল থেকে আলাদা করে তেল ও তেলজাতীয় তরল শুষে নিতে পারবে।
কয়েক বছর আগেই শুভেন্দুবাবুর সহকারী হিসাবে ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টারে যোগ দেন অতনু ঝাঁ। গবেষণা এগোতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই পরীক্ষাগারে তৈরি হয় নতুন ধরণের তুলো। প্রাকৃতিক তুলোকেই পরীক্ষাগারে কিছু বিক্রিয়ার মাধ্যমে বদলে ফেলা হয়েছে। তবে এই তুলো শুধু তেল শোষণই করবে না, তাকে শোধন করতেও সক্ষম হবে। খনিজ তেল ছাড়াও তেলজাতীয় অন্যান্য পদার্থ, যেমন বেনজিন, হেক্সিন ক্লোরোফর্ম ইত্যাদিও শুষে নিতে পারে এই তুলো। ২ কেজি তুলোর সাহায্যে ২৫ কেজি পর্যন্ত তেল পরিশোধন সম্ভব এই পদ্ধতিতে। আর ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণ রোধে এই পদ্ধতি কাজে লাগানো তো কেবল সময়ের অপেক্ষা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিপন্নপ্রায় প্রাণীদের অবলুপ্তি ঠেকাতে গণ-ভ্যাকসিনেশনের পথে বিজ্ঞানীরা