মশা মারতে ছত্রাক দাগা! অভিনব আবিষ্কার বাঙালি গবেষকের

ছত্রাক যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা কিছুদিন আগে বুঝিয়ে দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। তবে ছত্রাকও কখনো কখনো হয়ে রক্ষাকর্তা উঠতে পারে, এবার সেই হদিশই দিলেন এক বাঙালি গবেষক। হ্যাঁ, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকেনগুনিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগের বাহক, মশার লার্ভাকে নিধন করবে ছত্রাক। আর তাও মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই।

ট্রাইকোডারমা অ্যাসপেরেলাম। এই ছত্রাকই পরবর্তীকালে হয়ে উঠতে চলেছে মশাদমনের অন্যতম হাতিয়ার। তবে এই ছত্রাক নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই ছত্রাক ব্যবহৃত হয়ে আসে জৈব কীটনাশক হিসাবে। কৃষিক্ষেত্রে তা প্রতিহত করে রোগসৃষ্টিকারী অন্যান্য ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীবদের। কিন্তু মশার লার্ভাদমনেও যে সিদ্ধহস্ত এই ছত্রাক, তা আগে জানা ছিল না গবেষকদের। রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ সেন্টেনারি কলেজের অধ্যাপক ডঃ স্বপন ঘোষ সন্ধান দিলেন ম্যাজিক ফাঙ্গাসের এই বিচিত্র বৈশিষ্ট্যটির। 

বছর চারেক আগে প্রথম বিষয়টি নজরে আসে ডঃ ঘোষের। তারপরই ছাত্রদের নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা শুরু করেন তিনি। বাংলার বিভিন্ন রাজ্যে পরীক্ষা করা হয় এই ছত্রাকের কার্যকারিতা। সেইসঙ্গে মশা জন্মানোর জন্য বেশ কিছু মাপকাঠিরও সন্ধান দিয়েছে এই বিস্তারিত সমীক্ষা। তৈরি করা হয়েছে জমা জলে মশা জন্মানোর স্ট্যান্ডার্ড মার্ক। দীর্ঘ চার বছর গবেষণা চালানোর পর সম্প্রতি চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেন তিনি। আর সেই সাফল্য এককথায় অভাবনীয়ই। কারণ মাত্র কয়েক ফোটা ছত্রাকের সলিউশনই প্রায় এক চৌবাচ্চার সমান জমা জলে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম মশার লার্ভা নিধন করতে। তার থেকেও বড়ো কথা, এই ছত্রকা সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।

মূলত ছত্রাকটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন নিঃসরণ করে। যাতে রয়েছে কাইনিটেজ ও প্রোটিয়েজ নামের দুটি উৎসেচক। জমা জলে এই ছত্রাকের সলিউশন প্রয়োগের পর যা আটকে যায় মশার লার্ভার গায়ে। এই উৎসেচকগুলিই লার্ভার কোষপ্রাচীর ধ্বংস করে নষ্ট করে দেয় তার প্রতিরক্ষাকবজ। ফলে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই মারা যায় মশার লার্ভা।

আরও পড়ুন
শুরুতেই শনাক্ত হবে কোলন ক্যানসার, যুগান্তকারী আবিষ্কার ভারতীয় গবেষকদের

সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিললেও, বাংলায় এর ব্যবহারিক প্রয়োগ শুরু হতে আরও বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, বাংলার একাধিক পৌরসভা, এই ছত্রাক ব্যবহারে আগ্রহী দেখালেও এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের থেকে সবুজ সংকেত পায়নি ট্রাইকোডারমা অ্যাসপেরেলামের ব্যবহার। তবে এই ছত্রাকের প্রয়োগ শুরু হলে, বাংলায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ যে এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

আরও পড়ুন
নিজে থেকেই জুড়ে যাবে ভাঙা কেলাস, বাংলার গবেষকদের আবিষ্কারে তাজ্জব বিশ্ব

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সূর্যালোকেই বিয়োজন প্লাস্টিকের, যুগান্তকারী আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের