ক্রমশ করোনা আবহে দিন কেটে যাচ্ছে, তবু উপযুক্ত চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রত্যেকের মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন, কবে পাওয়া যাবে প্রতিষেধক? অনেক প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কোনোকিছুর উপরেই যেন ঠিক আস্থা রাখা যাচ্ছে না। তবে অন্তত একটা ঠিকঠাক ওষুধও যদি থাকে, যা দিয়ে কোভিড আক্রান্ত রোগীকে সংকটজনক অবস্থা থেকেও সারিয়ে তোলা যায়, তাহলে হয়তো আতঙ্ক খানিকটা কমতে পারে। তবে এবার বোধহয় সেই চাহিদা আর খুব দূরের স্বপ্ন নয়। না, নতুন কোনো ওষুধ নয়, বরং একাধিক পুরনো ওষুধের ডকিং-এর মাধ্যমেই নতুন কম্পোজিশন তৈরির পরিকল্পনা দিয়েছেন বঙ্গতনয়া শ্বেতা সিং। পশ্চিম বর্ধমান জেলার জামুড়িয়ার মেয়ে শ্বেতা কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হেক্টার ফ্লোরেজের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় তুলে ধরেছেন তেমনই সম্ভবনার ইঙ্গিত।
‘এফ ওয়ান থাউসেন্ড রিসার্চ’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে বেশ কিছু ওষুধের সংকেত এবং আণবিক গঠন বিশ্লেষণ করে দুই গবেষক দেখিয়েছেন, নিউমোনিয়া বা অ্যালার্জির জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধের মলিকিউলার ডকিং-এর মাধ্যমেই করোনা চিকিৎসা সম্ভব। তবে এই পত্রিকা একটি ওপেন ম্যাগাজিন। তাই গবেষণার কোনোরকম স্বীকৃতি পেতে গেলে তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে অন্যান্য চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদেরও একমত হতে হবে। এবং ইতিমধ্যে অনেকেই তাঁদের গবেষণা পরীক্ষাগারে প্রয়োগের প্রয়োজন আছে মনে করছেন। ফলে আগামী দিনে হয়তো এই পথেই হতে পারে করোনা সমস্যার সমাধান।
জামুড়িয়ার ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে শ্বেতার প্রথম জীবন কেটেছে পিতৃভূমিতেই। আসানসোল লরেটো কনভেন্ট থেকে পড়াশুনো করে চলে যান পুনে-তে। সেখান থেকে পিএইচডি। এবং এর পর ২০১৮ সালে বিবাহের পর আমেরিকা। সেখানেই চলছিল উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি। এর মধ্যেই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ তাঁকে বুঝিয়ে দিল, মানুষের জন্য কিছু করার সময় এসেছে। আর এভাবেই দীর্ঘ গবেষণার পর ১২৯টি ওষুধ এবং ৯৯২টি আয়ুর্বেদিক সামগ্রীর মেলবন্ধনে নতুন কম্পোজিশন তৈরির পরিকল্পনা করলেন তিনি। এখনও স্বীকৃতি না পেলেও শ্বেতার এই গবেষণা যে ভাইরাস মোকাবিলার এক বিকল্প পথের হদিশ দিল, সেকথা বলাই যায়। তাঁর নিজের কথাতেই, নতুন ওষুধ তৈরি করতে অনেক সময় লাগবে। তার থেকে যা আছে তাকে ব্যবহার করাই ভালো।
Powered by Froala Editor