মাঠে মাঠে ধান পাকলে এসে যায় ফসল কাটার সময়। তারপর নতুন ধান গোলায় তুলে আবার পরের ফসল বোনার প্রস্তুতি। তবে এবার আর বারবার ফসল বোনা নয়। বরং একবার চাষ করলেই এক বছর ধরে ফসল দেবে ধানগাছ। সম্প্রতি এমনই অবাক করা আবিষ্কার ঘটিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ডঃ আবেদ চৌধুরী (Dr. Abed Chowdhury)। তবে তিনি নিজে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হলেও এই ফসলের পরীক্ষা চলেছে বাংলাদেশের মাটিতেই। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি গ্রামে দুই বিঘা জমিতে বিগত ১০ বছর ধরে চলছে পরীক্ষা। আর অবশেষে এমন ধানের প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, একবার চাষ করলে যা ৫ বার ফসল দেবে। আর তাই এই ধানের নাম রাখা হয়েছে পঞ্চব্রীহি।
“আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও দেখেছি, সারাবছরব্যাপী ধান উৎপাদনের মতো প্রজাতি তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রথমবার ফলন ঠিকঠাক হলেও পরের বার ফলন যথেষ্ট কমে আসে। তৃতীয়বারে ফলন অত্যন্ত কম হয়।” প্রহরকে বলছিলেন ধান্য গবেষক ডঃ বিজন অধিকারী। অন্যদিকে, আবিষ্কর্তা আবেদ চৌধুরীর দাবি, তাঁর এই ধান শুধু সারা বছর ফলন দেয় না। সেইসঙ্গে এটি উচ্চফলনশীলও। প্রথমবার ফসল পাকার সময় এক হেক্টর জমিতে ৪ টন পর্যন্ত ধান উৎপাদন সম্ভব। অবশ্য তারপর থেকে উৎপাদন কমতে শুরু করে। যদিও সব মিলিয়ে একবার ফসল বোনার তুলনায় ৫ গুণ বেশি ফসল ওঠে। ফলে মোট হিসাবে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।
২০১০ সালে ২০টি প্রজাতির ধানের চারা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন আবেদ চৌধুরী। এগুলি প্রতিটিই বছরে দুবার ফসল দিতে সক্ষম। তবে তার মধ্যে মাত্র ২টি প্রজাতি ৫ বার পর্যন্ত ফসল দিতে সক্ষম হয়। কানিহাটির মাটিতে পরীক্ষার পর বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার মাটিতেও পরীক্ষা করে দেখতে চান তিনি। একবারমাত্র ফসল বোনার কারণে কৃষকদের যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনই কমবে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও। তবে ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা সংস্থার গবেষকরা। সংস্থার পরিচালক ডঃ মোহম্মদ শাজাহান কবীর জানিয়েছেন, বর্তমানে ফসলের ফলন বাড়ানোর কথাই ভাবছেন সকলে। সেখানে এই পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন হ্রাস পাবেই। আবেদ চৌধুরীর সঙ্গে এই নিয়ে তাঁরা কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি আলোচনায় বসতে রাজি হননি। ফলে শেষ পর্যন্ত এই আবিষ্কারের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পাঁচেই শেষ নয়, পদার্থের নতুন দশার হদিশ পেলেন গবেষকরা