২১ ঘণ্টায় গোচালা-জয়! নজির বাঙালি অধ্যাপকের

৭১.৬ কিলোমিটার পথ। তবে পিচ বাঁধানো রাস্তা নয়। সে-পথের পদে পদেই লুকিয়ে রয়েছে প্রাণঘাতী বিপদ। কোথাও রাস্তার ঠিক কোল ঘেঁষে নেমে গেছে কয়েক হাজার ফুটের গভীর খাদ। সেইসঙ্গে সারাক্ষণ কুয়াশার চাদর মুড়ে রেখেছে গোটা পাহাড়ি উপত্যকাকে। এবার এই অন্যতম বিপদসঙ্কুল পথই মাত্র একদিনে অতিক্রম করে নজির গড়লেন এক বঙ্গসন্তান। 

অভিষেক তুঙ্গ (Avisek Tunga)। সম্প্রতি কলকাতা-নিবাসী এই তরুণের দৌলতেই তৈরি হল নতুন রেকর্ড। মাত্র ২১ ঘণ্টার মধ্যে গোচালা-জয় (Goechala) করে ফিরে এলেন বাঙালি পর্বতারোহী। সাধারণভাবে যে পথ অতিক্রম করতে অভিযাত্রীদের সময় লাগে প্রায় ৭-৮ দিন। 

গত ২৯ মে-র কথা। তখন ভোররাত। ঘড়ির কাঁটায় ৪টে বেজে ২০ মিনিট। সূর্যের আলো ফোটেনি তখনও। ইয়ুকসমের কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক থেকে দুঃসাহসিক অভিযানে রওয়ানা দিয়েছিলেন দুই বঙ্গসন্তান। লক্ষ্য, একদিনের মধ্যে দৌড়ে গোচালা-জয়। অভিষেকের সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহযোদ্ধা সৌম্যদীপ মণ্ডল। রাস্তার প্রতিকূলতা তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে আকাশ ভেঙে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন। আরও কঠিন করে তুলেছিল তাঁদের অভিযানকে। অভিষেকের কথায়, “পাহাড়ে বর্ষা ঢুকে যাওয়ায় মেঘ-বৃষ্টির মধ্যেই গোটা পথ চলতে হয়েছে। সেখানে রাস্তা খুঁজে বার করাটাও একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল।” দুর্ভাগ্যবশত, পাঁচ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সৌম্যদীপ। তবে হাল ছাড়েননি অভিষেক। শ্বাসকষ্ট, শারীরিক ক্লান্তি, খারাপ আবহাওয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই লড়াই চালিয়ে যান প্রকৃতির সঙ্গে। হ্যাঁ, লক্ষ্যভেদ করার পরেই থেমেছিলেন তিনি। ৩০ মে রাত ১টা নাগাদ ইয়ুকসমের ক্যাম্পে ফিরে আসেন অভিষেক। 

অবাক করার বিষয় হল, পর্বতাভিযান এবং স্কাই-রানিং-এর জগতে এই অন্যতম রেকর্ড তৈরি করলেও পর্বতারোহন অভিষেকের পেশা নয়। ব্যক্তিজীবনে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক। সেটা ২০০৮ সাল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় থেকেই মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবে নাম লিখিয়েছিলেন অভিষেক। তারপর পাহাড়ই কখন যেন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর কাছে। ট্রেক, সাইকেলিং, স্কাই-রানিং, পর্বতাভিযান— সব আগুনেই হাত সেঁকেছেন তিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিনিয়ে এনেছেন সাফল্য। এবার আরও এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাঙালি অধ্যাপক। প্রশ্ন থেকে যায়, দুটি ভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে কীভাবে ছন্দ বজায় রেখেছেন তিনি? “১০টা থেকে ৫টা সময়টা অ্যাকাডেমিক দিক সামলাতে হয়। তার বাইরে সকালবেলায় প্রতিদিনই প্রস্তুতি চলে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের”, হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন অভিষেক।

আরও পড়ুন
ঋতুস্রাবকে সঙ্গী করেই পর্বতজয় দিল্লির প্রকৃতির

সান্দাকফু ট্রেইল রান দিয়েই শুরু হয়েছিল তাঁর যাত্রাপথ। কথা কথায় জানা গেল, গোচালা-জয়ের আগে চলতি বছরেও সান্দাকফু-তে স্কাই-রান করেছেন তিনি। ঝালিয়ে নিয়েছেন নিজের সামর্থ্যকে। তবে এখানেই শেষ নয়। বলতে গেলে এখানেই থেকেই শুরু হল তাঁর স্কাই-রানিং-এর নতুন অধ্যায়। অভিষেক জানালেন, “যে-সকল ট্রেক রুটগুলো অতিক্রম করতে সাধারণত ৮-১০ দিন লাগে, একে একে সেগুলো একদিনে অতিক্রম করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

আরও পড়ুন
৩৮ বছর পর ‘নিখোঁজ’ পর্বতারোহীর হদিশ!

কিছুদিন আগেই পর্বতাভিযানে পর পর দুটি রেকর্ড তৈরি করেছিলেন চন্দননগরের পিয়ালি বসাক। তাঁর পর অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের দুনিয়ায় অভিষেকের দৌলতে আবার আলোচনায় উঠে এল বাংলার নাম…

আরও পড়ুন
পাহাড়চুড়োয় একের পর এক দুর্ঘটনা, কী বলছেন বাংলার পর্বতারোহীরা?

ছবি ঋণ : ফেসবুক

Powered by Froala Editor