সুদূর ইতালিতে বাঙালির স্পর্ধা, ভিলা রোমানা-য় প্রতিনিধিত্ব শূন্য দশকের কবিদের

করোনা ভাইরাস এক লহমায় থামিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। একটা ভয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছি সবাই। নিত্য নতুন বিধি নিষেধের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে সবাইকে। কিন্তু কবিতা কি কখনও বাধা মানে? করোনা কি থামাতে পারে শিল্প ও স্রষ্টার কাজ? সেসব তো বহমান নদীর মতো; নৌকো নামিয়ে খানিক দেখে নেওয়া চারিদিক। সীমান্ত ভেঙে ছড়িয়ে পড়া অক্ষরে অক্ষরে। সেই কবিতা, সেই অক্ষরই জুড়ে দিল বাংলা, প্যালেস্টাইন এবং ইতালিকে। গতকাল ইতালির শতাব্দীপ্রাচীন শিল্পসংস্থা ভিলা রোমানায় অনুষ্ঠিত হল কবিতার আসর। যেখানে পরোক্ষে উপস্থিত রইলেন পশ্চিমবঙ্গ এবং প্যালেস্টাইনের তরুণ কবিরা…

১৯০৫ সালে জার্মান শিল্পী ম্যাক্স ক্লিংগার ইতালির ফ্লোরেন্স শহরের বাইরে একটি ভিলা কিনে সেখানে তৈরি করেন শিল্প ও শিল্পীর আড্ডাস্থল— ‘ভিলা রোমানা’। সেই তখন থেকে আজ পর্যন্ত নানা কর্মকাণ্ডের আয়োজন করে আসছে এই অলাভজনক সংস্থাটি। শুধু ইতালিতেই নয়; গোটা বিশ্বের সমস্ত শিল্পমাধ্যমগুলির জন্য আয়োজিত হয় ‘ভিলা রোমানা পুরস্কার’। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে শিল্পীরা এখানে আসেন, থাকেন এবং সৃষ্টির আনন্দে মেতে ওঠেন। এক কথায় সমস্ত বেড়াজাল ভেঙে নতুন রঙে ওড়ার জায়গা এই শতাব্দীপ্রাচীন ভিলা রোমানা। 

লকডাউন ও করোনার জন্য এইবছর শিল্পীরা এখানে আসতে পারেননি। এদিকে ইতালির অবস্থাও ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আসছে। করোনা পরিস্থিতি অনেকটা থিতিয়ে এসেছে। এমন সময়ই আয়োজন করা হল একটি বিশেষ অনুষ্ঠান- 'অন দ্য উইংস অফ পোয়েট্রি, কলকাতা টু প্যালেস্তাইন'। যেখানে প্যালেস্টাইন আর বাংলা থেকে তরুণ কবিরা প্রযুক্তির মাধ্যমেই নিজেদের কবিতা নিয়ে হাজির থাকলেন। কলকাতা এবং বাংলার সাহিত্য জগত এবং এখনকার বাংলা কবিতা সম্পর্কে সেখানকার দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন দ্বিভাষিক (ইতালিয়ান ও ইংরাজি) কবি, অনুবাদক এবং একজন সক্রিয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মী পিনা পিক্কোলো। সেই অনুষ্ঠান সম্পর্কে তিনি প্রহরকে জানালেন, “আমার কাছে কবিতা কেবল অনুভূতির নয়; বরং কবিতা এবং তার শব্দের মাধ্যমে নতুন একটা দরজা, নতুন কোনো দর্শনের মুখোমুখি হওয়া। বাংলার কবিতা বলতে গেলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দিয়েই শুরু করা হয়। তারপর কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিবেশ, বইমেলা, কলেজ স্ট্রিট এই সমস্তটার সঙ্গে দর্শককে পরিচিত করানোটাও জরুরি। সেটাই করেছি আমি। সেইসঙ্গে ছিল বাংলার তরুণ কবিদের কবিতা এবং তার অনুবাদ।”

আরও পড়ুন
যুগে-যুগে রামায়ণ লিখেছেন যে সাহসিনীরা, তাঁদের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন নবনীতা

আরও পড়ুন
বই বনাম পিডিএফ বিতর্ক - ই-বুকই ভবিষ্যৎ? কী বলছেন বাংলার কবি-লেখক-প্রকাশকরা?

মূলত শূন্য দশকের কবিদের সমাবেশ ঘটেছিল ভিলা রোমানায়। অনিমিখ পাত্র, সঙ্ঘমিত্রা হালদার এবং অরিত্র সান্যালের কবিতাপাঠের ভিডিও দেখানো হয়েছে। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উল্লিখিত হয় অনুরাধা বিশ্বাস, হিমালয় জানা, ঋতম সেন, রাকা দাশগুপ্ত, স্বাগতা দাশগুপ্ত, অনুপম মুখোপাধ্যায় প্রমুখের নামও। এর সঙ্গে ছিল কবি শঙ্কর লাহিড়ীর বানানো একটি তথ্যচিত্র ‘উত্তরমালা, বেরিয়ে এসো’-র কিছু অংশ। বাংলার পাশাপাশি ছিলেন প্যালেস্টাইনের চারজন কবিও। ভিলা রোমানার ডিরেক্টর অ্যাঞ্জেলিকা স্টিপকেন প্রহরকে জানান, “দিনের শেষে সমস্ত কবিদের কবিতা আমাদের কাছে অন্য একটা জগতের সন্ধান দিয়েছে। আমাদের কাছে যে মুহূর্তে এমন ভাবনার কথা আসে, সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। আর সেটাই সবার জন্য সুখকর হয়ে ওঠে।” সব মিলিয়ে সীমান্তের বেড়া ভেঙে কবিতার উদযাপনে মেতে উঠল ইতালি।

Powered by Froala Editor

Latest News See More