‘যেখানেই পাবে ছাই
উড়াইয়া দেখো তাই
পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’
শুধু ইতিহাসবিদ নয়, ওপরের কথাটি বড্ড বেশি বাস্তব আমাদের জীবনে। রতন ‘অমূল্য’ই হোক আর যাই হোক, চমকিত করেছে বারবার। একটি বই। যেটার বাহ্যিক পরিচয় একটি ধর্মগ্রন্থ। কিন্তু, পাতা ওলটালেই, কিমাশ্চর্যম! বইটার পাতা জুড়ে বাংলা ভাষা! ৫০০ পাতা জুড়ে ছড়িয়ে আছে বাংলায় লেখা সুফি কবিতা। আর এই ঘটনা ঘটল কিনা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে!
১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রোকেন হিল হিস্টোরিকাল সোসাইটি সে-দেশের মরু এলাকায় একটি মসজিদের সন্ধান পায়। করোগেটেড আয়রন দিয়ে তৈরি এই লাল রঙের মসজিদটি তৈরি হয়েছিল ১৮৮৭ সালে। বলা হয়, এখানে নাকি এইরকম দুটো মসজিদ ছিল। এখন এই একটাই অবশিষ্ট আছে।
যাই হোক, সোসাইটির সদস্যরা সেই মসজিদটিকে পুনরুদ্ধার করেন। সেই সঙ্গে মসজিদের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় একটি শতাব্দীপ্রাচীন বই। ‘দ্য হোলি কোরান’। স্বাভাবিক, মুসলিম ধর্মস্থানে তো সেখানকার ধর্মগ্রন্থই পাওয়া যাবে।
বাস্তবে কিন্তু সেই অনুমান ঠিক হয়নি। এর রহস্য ভাঙেন এক বাঙালি গবেষিকাই। বাংলাদেশের শামিয়া খাতুন ওই মসজিদে গিয়ে বইটি দেখেন এবং জানান, প্রায় লাল হয়ে যাওয়া পাতাগুলোর ভেতরে কোরানের কোনও চিহ্নই নেই! আরবি, ফারসি বা উর্দু— কোনও ভাষাই নেই। কী আছে? সুফি কবিতা। আর সেই সমস্ত লেখা, বাংলা ভাষায়! হ্যাঁ, একটা আদ্যোপান্ত বাংলা বই উদ্ধার করা হয় অস্ট্রেলিয়ার পুরনো মসজিদের ভেতর থেকে।
বইটির প্রকৃত নাম ‘কাসাসোল আম্বিয়া’। অর্থাৎ, সর্বশক্তিমানের গল্প। ১৮৬১-এর কাছাকাছি সময় এটি প্রকাশিত হয়েছিল। হয়েছিল এই কলকাতাতেই। সেখান থেকেই কারোর মাধ্যমে বইটি পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকে এই মসজিদে। তাহলে কি কোনো সুফি মতে বিশ্বাসী ব্যক্তিই বইটি পৌঁছে দিয়েছিলেন সেখানে? দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসায়ীরাই বানিয়েছিলেন এই মসজিদ - ইতিহাসের সাক্ষ্য এমনই।