ম্যানগ্রোভ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় সেরা বাঙালি আলোকচিত্রী

সবুজের শামিয়ানা ঘিরে রেখেছে চতুর্দিক। নির্জন চরাচর। এরই মধ্যে হাতে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি ধরে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ ব্যক্তি। অন্য হাতে ধরে রয়েছেন জ্বলন্ত কাঁচা ডাল। সেখান থেকে গাঢ় ধোঁয়ার কুণ্ডলি পাক দিয়ে উঠে যাচ্ছে আকাশের দিকে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এই ছবি তোলা হয়েছে সুন্দরবনে। মধু সংগ্রহ করা ঠিক কতটা কষ্টসাধ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ— তা স্পষ্ট উঠে আসে এই ছবি থেকেই। বাংলাদেশের আলোকচিত্র শিল্পী মুশফিকুর রহমানের তোলা এই ছবিই এবার জিতে নিল চলতি বছরের ম্যানগ্রোভ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড।

২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ম্যানগ্রোভ অ্যাকশন প্রোজেক্ট। লক্ষ্য, বিশ্ববাসীর কাছে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সঙ্গে জনজীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে তুলে ধরা। ম্যানগ্রোভের যে বৈচিত্রময় বাস্তুতন্ত্রও যে বিলুপ্তির সম্মুখীন, সে ব্যাপারেও জনসচেতনতা গড়ে তোলাও অন্যতম উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক সংস্থাটির।

মধুসংগ্রহ এবং মৎস্য শিকারই মূলত সুন্দরবনের মানুষদের জীবিকা। তবে এই জীবিকায় পদে পদে লুকিয়ে রয়েছে বিপদের আশঙ্কা। বাঘ কিংবা কুমিরের আক্রমণের আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সাপে কাটার ভয়ও। এসবের পরেও জীবন নির্ধারণের জন্য প্রান্তিক বাদাবন অঞ্চলের মানুষদের এই পেশাকেই বেছে নিতে হয়। দুই বঙ্গেই প্রতিবছর কয়েকশো মানুষ প্রাণ হারান মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে। সেই ছবিই যেন ফুটে উঠেছে মুশফিকুর রহমানের ক্যামেরার লেন্সে।

চলতি বছরে, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বের ৬৫টি দেশের আলোকচিত্রগ্রাহকরা। জমা পড়েছিল প্রায় ১৩০০টি ছবি। ভিন্ন ভিন্ন মোট ছ’টি বিভাগে দেওয়া হয় এই পুরস্কারটি। তার মধ্যে সার্বিকভাবে সেরা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের আলোকচিত্রকারের ফটোগ্রাফটি। তাছাড়াও এবছর আন্তর্জাতিক এই পুরস্কারের পালক উঠেছে আরও এক বাঙালি আলোকচিত্রশিল্পীর মুকুটে। ম্যানগ্রোভ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগে এই পুরস্কার পেয়েছেন ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের বন্যপ্রাণ ফটোগ্রাফার অরিজিৎ দাস।

আরও পড়ুন
আজও ১৬০ বছরের পুরনো পদ্ধতিতেই ছবি তোলেন এই ফটোগ্রাফার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ছবি তুলতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন যেসব ফটোগ্রাফার