ফিরে দেখা ২০২২ : চলে গেলেন যেসব স্বনামধন্য বাঙালি— পর্ব ১

/১১

শেষ হতে চলেছে আরও একটি বছর। এই এক বছরে যেমন আমরা পেয়েছি অনেককিছু, তেমনই দীর্ঘ হারানোর তালিকাও। বছর শেষে ফিরে দেখা যাক এমনই কিছু কিংবদন্তি বাঙালিদের, গত এক বছরে যাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। প্রহরের পাতায় থাকল তাঁদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা।

/১১

প্রশান্ত ভট্টাচার্য (৮ জানুয়ারি, ২০২২)— রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে লোকগান, সঙ্গীতের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ ছিল তাঁর। তবে সঙ্গীতের দুনিয়ায় প্রশান্ত ভট্টাচার্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল গণসঙ্গীত ও নাটকের মধ্যে দিয়েই। সেটা সত্তরের দশক। একদিকে নকশাল আন্দোলন, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ— গানকে সঙ্গী করেই লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। নাট্য, যাত্রা-জগতে তো বটেই, ছিলেন ইন্ডিয়ান রেডিও-র নিয়মিত শিল্পী। তবে শেষ জীবনে লোকচক্ষুর আড়ালেই বিদায় নিলেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী।

/১১

শাঁওলি মিত্র (১৬ জানুয়ারি)— অভিনয় ছিল তাঁর রক্তেই। ছোটো থেকেই বাবা-মায়ের হাত ধরেই থিয়েটারের জগতে পা রাখেন শম্ভু-কন্যা শাঁওলি। নাটক নিয়েই উচ্চশিক্ষা। প্রাথমিকভাবে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, পরবর্তীতে নিজস্ব নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বাংলা থিয়েটারপ্রেমীদের উপহার দেন ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘কথা অমৃতসমান’, ‘নাথবতী অনাথবৎ’-এর মতো নাটক। শাঁওলির প্রয়াণে ইতি পড়েছে রঙ্গমঞ্চের এক বর্ণময় অধ্যায়ে।

/১১

নারায়ণ দেবনাথ (১৮ জানুয়ারি)— শাঁওলির মৃত্যুর ঠিক দু’দিনের মাথাতেই এসেছিল আরও এক দুঃসংবাদ। প্রয়াত হয়েছিলেন এমন এক শিল্পী, যাঁর হাত ধরেই গড়ে উঠেছে আপামর বাঙালির শৈশব। নারায়ণ দেবনাথ। বাংলা সাহিত্যে কমিকসকে জনপ্রিয় করে তোলার মূলে রয়েছেন তিনিই। হাঁদাভোঁদা থেকে শুরু করে নন্টে-ফন্টে— তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ বাংলা কমিকসের ইতিবৃত্ত। মৃত্যুকালে কিংবদন্তি কমিক-স্রষ্টার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।

/১১

গোরা সর্বাধিকারী (১৯ জানুয়ারি, ২০২২)— জার্মানি তে মোটা মাইনের চাকরি। সেই চাকরির সুযোগ ফিরিয়ে দিয়েই, গানের অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে ছুটেছিলেন শান্তিকেতনে। শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর মতো মানুষের সহচর্য পেয়েছেন গোরা। এমনকি সলিল চৌধুরীর করা মিউজিকেই প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের গান রেকর্ড করেন তিনি। সঙ্গীতচর্চা তো বটেই, ১৭-১৮ বছর বিশ্বভারতীর মিউজিক বোর্ডে ছিলেন তিনি।

/১১

সুভাষ ভৌমিক (২২ জানুয়ারি)— কলকাতা ময়দানের ‘অলরাউন্ড ফরোয়ার্ড’ তিনি। কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের পরিচিত ছিলেন বুলডোজার নামে। তাঁর ক্ষিপ্রগতি, শারীরিক ভারসাম্য এবং সুযোগসন্ধানী মানসিকতা কাঁপ ধরাত বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের বুকে। কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপ, ফেডারেশন কাপ-সহ একাধিক ট্রফি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। শুধু খেলোয়াড় হিসাবেই নয়, ইস্টবেঙ্গলকে আশিয়ান কাপ এনে দিয়ে কোচিং-এর জগতেও গড়েছেন অনন্য নজির।

/১১

সুব্রত লাহিড়ী (১৭ ফেব্রুয়ারি)— বিখ্যাত সিনেমার পরিচালক কিংবা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম দর্শকরা মনে রাখলেও, উপেক্ষিত হন সেলুলয়েড পর্দার পিছনে থাকা কুশলীরা। সুব্রত লাহিড়ী তেমনই এক মানুষ। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ থেকে শুরু করে ‘আগন্তুক’— সত্যজিতের অধিকাংশ ছবিতেই সহকারী পরিচালকের ভূমিকা পালন করেছেন সুব্রত লাহিড়ী। নিজেও একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন তিনি। অবশ্য সেই সিনেমার অস্তিত্ব নেই কোনো আর্কাইভেই। বলতে গেলে, তারকা হতে চাননি কোনোদিনই। শেষ জীবনেও নীরবেই বিদায় নিয়েছিলেন সকলের আড়ালেই।

/১১

সুরজিৎ সেনগুপ্ত (১৭ ফেব্রুয়ারি)— মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহামেডান— কলকাতার তিন বড়ো ক্লাবেই খেলেছেন সুরজিৎ। সন্তোষ ট্রফিতে করেছেন বাংলার অধিনায়কত্বও। সবমিলিয়ে জনপ্রিয়তায় সুভাষ ভৌমিকের চেয়ে কোনো অংশেই কম যান সুরজিৎ। চলতি বছরের শুরুতেই কোভিডে আক্রান্ত হন কিংবদন্তি ফুটবলার। ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা। শ্বাসকষ্টজনিত কারণে প্রয়াত হন বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক।

/১১

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (১৫ ফেব্রুয়ারি)— তাঁকে বাংলা গানের জগতে স্বর্ণযুগের শেষ শিল্পী বললেও ভুল হয় না এতটুকু। বাংলা সিনেমার গান ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পদ্ম পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হলেও পুরস্কার ফিরিয়ে দেন তিনি। ঠিক তারপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, ধরা পড়ে করোনায় আক্রান্ত তিনি। কোভিডের কারণেই মৃত্যু হয় গীতশ্রী সন্ধ্যার।

১০/১১

বাপ্পি লাহিড়ী (১৫ ফেব্রুয়ারি)— বাংলা গানের আকাশে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার দিনই, আরও এক তারকাপতন হয় বাংলা জগতে। বাপ্পি লাহিড়ী। সন্ধ্যার মৃত্যুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তাঁর প্রয়াণের খবর আসে বাঙালির কাছে। করোনাকে হার মানিয়ে বাড়িতে ফিরলেও, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। ভর্তি করা হয় মুম্বাই-এর একটি হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় অপরেশ-পুত্রের।

১১/১১

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (২১ ফেব্রুয়ারি)— আশা ভোঁসলের ‘ও পাখি উড়ে আয়’ কিংবা হৈমন্তী শুক্লার ‘সারেঙ্গিটা বাজছে’-র মতো গানের নেপথ্যে রয়েছেন এই মানুষটিই। বাংলার স্বর্ণযুগের অন্যতম সুরকার অভিজিৎ। তাঁর সুরেই কণ্ঠ দিয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মান্না দে, আশা ভোঁসলে-এর মতো শিল্পীরা। বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। অবশেষে ভাষাদিবসের দিনই না-ফেরার জগতে পাড়ি দেন অভিজিৎ।

Powered by Froala Editor

Latest News See More