Powered by Froala Editor
এ-বছর পদ্মশ্রী পুরস্কার পাচ্ছেন যে দশ বাঙালি
১/৯
ঘোষিত হল ২০২১ পদ্ম পুরস্কারের তালিকা। ২০২১ সালের পদ্মবিভূষণ পেলেন ৭ জন। পদ্মভূষণ ও পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাককের সংখ্যা যথাক্রমে ১০ জন ও ১০২ জন। আর পদ্মশ্রী পুরস্কারের সেই তালিকায় এবার জয়জয়কার বাঙালির। মোট দশজন বাঙালি এই বছর পেতে চলেছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। তার মধ্যে দুজন প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাগরিক। দেখা নেওয়া যাক, কারা পেলেন এই পুরস্কার...
২/৯
নারায়ণ দেবনাথ— বাংলা কমিক্সের পথিকৃৎ বললে খুব একটা ভুল হবে না। হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল দি গ্রেট, বাহাদুর বেড়াল, ব্ল্যাক ডায়মন্ড, ইন্দ্রজিৎ-সহ একাধিক বাংলা কমিক্স তৈরি করেছেন নারায়ণ দেবনাথ। একা হাতেই ছবি আঁকা থেকে শুরু করে শব্দস্থাপন— সবটাই করেছেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই বাঙালি পরিচিত হয়েছে সাহিত্যের এই ধারার সঙ্গে। এর আগে বিশেষ রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি, বঙ্গবিভূষণ পেয়েছেন তিনি। এবার ৯৬ বছর বয়সে পদ্ম পুরস্কারের স্বীকৃতি মিলল কিংবদন্তি কমিক্স-নির্মাতার।
৩/৯
মৌমা দাস— খেলা বিভাগে এই বছর পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেন বঙ্গতনয়া মৌমা দাস। ১৯৯৭ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন কলকাতার এই তরুণী। কমনওয়েলথ গেমসে সোনা-সহ তাঁর ঝুলিতে রয়েছে একাধিক মেডেল। তাঁর মুকুটে রয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার কৃতিত্বও। এর আগে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।
৪/৯
সুজিত চট্টোপাধ্যায়— বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগর। সেখানে ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’ বললেই রাস্তা দেখিয়ে দেবে যে কেউ। হ্যাঁ, এমনই এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েক দশক ধরে চালিয়ে আসছেন বর্ধমানে অশীতিপর শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়। যেখানে পাঠক সংখ্যা প্রায় তিনশোরও বেশি। আর গুরুদক্ষিণা? মাস পড়লে মাত্র ২ টাকা। গরিব পরিবারের সন্তানদের জন্যই এই উদ্যোগ তাঁর। পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া রোগী এবং দুর্গতদের জন্যেও নিজের সমস্ত সঞ্চয়ই উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের পদ্ম পুরস্কারের তালিকায় রয়েছেন তিনিও।
৫/৯
বীরেন কুমার বসাক— কারখানায় তৈরি সিল্ক হোক কিংবা কৃত্রিম তন্তুতে তৈরি কাপড়ে ছেয়ে গেছে বাজার। হারাতে বসেছে বাংলার আদি তাঁত শিল্প। কমছে বিনিয়োগও। তবু বাংলার আদি এই শিল্পের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতেই অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বীরেন কুমার বসাক। দেখাচ্ছেন বস্ত্রশিল্পের ক্ষেত্রে হাতে বোনা কাপড়ের বিকল্প হয় না কোনো। শুধু উঁচু দরের শাড়িই নয়, বরং তার নকসাতেও অভিনবত্ব এনেছেন নদিয়ার ফুলিয়ার এই তাঁত শিল্পী। তাঁতের কাপড়ে সম্পূর্ণ কৃত্তিবাসী রামায়ণ লিখেও লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে নাম তুলেছিলেন তিনি। এবার পদ্মশ্রীতে সম্মানিত হচ্ছেন নদিয়ার এই ষাটোর্ধ্ব শিল্পী।
৬/৯
ধর্মনারায়ণ বর্মা— তুফানগঞ্জের অশীতিপর শিক্ষক ধর্মনারায়ণ বর্মা এই বছর পাচ্ছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। বাংলা ও সংস্কৃতের শিক্ষকতা করে এলেও কামতাপুরী ভাষার প্রসারে বিশেষ অবদান রয়েছে তাঁর। ‘কামতাপুরী ভাষা সাহিত্যের রূপরেখা’ বইটি এই উপভাষার অন্যতম সংরক্ষণ কাজ বলেই বিবেচিত হয়। এর আগে গ্লোবাল পিস ইউনিভার্সিটি থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল তাঁকে। তাছাড়াও কামতারত্ন উপাধি পেয়েছেন নৃপেন্দ্রনারায়ণ মোমোরিয়াল হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক।
৭/৯
সনজীদা খাতুন— প্রতি বছর ১০ জন বহির্ভারতীয় ব্যক্তিত্বকে দেওয়া হয় পদ্ম পুরস্কার। এবার সেই তালিকায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গেই রয়েছেন দুই বাঙালি। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের অন্যতম পরিচিত মুখ সনজীদা খাতুন এই বছর পাচ্ছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। তিনি একাধারে অধ্যাপিকা, সংগঠক, গবেষক, লেখক এবং সঙ্গীতশিল্পী। রবীন্দ্রসঙ্গীতে রয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা। বাংলাদেশের জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মীলন পরিষদেরও অন্যতম সদস্য তিনি।
৮/৯
কাজী সাজ্জাদ আলি— বাংলাদেশের প্রাক্তন কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলিও সম্মানিত হচ্ছেন এবছরের পদ্মশ্রী পুরস্কারে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনস্বীকার্য অবদান ছিল তাঁর। প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন তিনি। কাজের সূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর পোস্টিং হয়। তবে ১৯৭১ সালে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের আবহে দেশের জন্য সামরিক বাহিনী ছেড়ে আন্দোলনে যোগদান করেন কাজী সাজ্জাদ আলি। এর আগে দেশের স্বাধীনতার জন্য উল্লেখযোগ্য অবদানের কারণে পেয়েছেন সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীরপ্রতীক খেতাব’।
৯/৯
এছাড়াও পদ্মশ্রী সম্মান পেলেন রাজ্যের আরও দুই ব্যক্তিত্ব জগদীশ চন্দ্র হালদার ও গুরুমা কমলি সোরেন। শিক্ষা এবং সংস্কৃতি প্রসারে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন জগদীশ চন্দ্র হালদার। অন্যদিকে সাঁওতাল পরগণা এবং সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের পিছনে গুরুমা সোরেনের অবদান অস্বীকার করার জায়গা নেই কোনো। সাঁওতালি সংস্কৃতির সংরক্ষণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।