ওভারকোর্টের পকেটে ভারি পাথর ভরে উজ নদীতে নেমে গিয়েছিলেন তিনি। আর ফিরে আসেননি। কয়েকদিন পর অনুসন্ধানকারীরা খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর নিথর দেহ। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে কিংবদন্তি ব্রিটিস লেখিকা, ঔপন্যাসিক ও সমালোচক ভার্জিনিয়া উলফকে (Virginia Woolf) নিয়ে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, ব্রিটেনে জন্মগ্রহণ করলেও আংশিক বাঙালি ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম আধুনিকতাবাদী লেখিকা।
হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন দিল্লি-নিবাসী স্কটিশ লেখক ও ঐতিহাসিক উইলিয়াম ডালরিম্পল (William Dalrymple)। আফগানিস্তান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একাধিপত্যের ওপর বিস্তারিত গবেষণার জন্যই বিখ্যাত ডালরিম্পল। যদিও তাঁর একটি ভিন্ন পরিচয়ও আছে। সম্পর্কে তিনি ভার্জিনিয়া উলফের আত্মীয়। হ্যাঁ, ভার্জিনিয়া উলফের গ্রেট নেফিউ তিনি। আর সেই সূত্রেই নিজের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা শুরু করেছিলেন উইলিয়াম। ইতিহাস খুঁড়ে বার করেন অ্যাডলিন ভার্জিনিয়া স্টিফেনের বঙ্গযোগ।
উইলিয়ামের মতে ভার্জিনিয়ার জন্ম ব্রিটেনে হলেও, তিনি আদতে ফ্রাঙ্কো-বাঙালি পরিবারের সদস্যা। ভার্জিনিয়ারও দু’প্রজন্মের আগের কথা। পশ্চিমবঙ্গ হুগলি জেলার চন্দননগর তখন ফরাসিদের অন্যতম উপনিবেশ। সেখানকারই এক বাঙালি তরুণীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন ভার্জিনিয়ার মাতামহ। ২০১৬ সালে বিবিসি-র একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদনে সেই বিবাহের আইনি কাগজ উদ্ধার করেও প্রকাশ করেন উইলিয়াম ডালরিম্পল। পরবর্তীতে ভার্জিনিয়ার মা-এর সঙ্গে বিবাহ হয় ব্রিটিশ সাহাবের। সেই সূত্রেই ইংল্যান্ডেই জন্ম ভার্জিনিয়ার। তবে কলকাতার বাংলার সঙ্গে একেবারে সম্পর্কছিন্ন হয়ে যায়নি ফ্র্যাঙ্কো-বাঙালি পরিবারটির। ভার্জিনিয়ার মাসিমা জুলিয়া মার্গারেট হয়ে উঠেছিলেন কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। এমনকি উনিশ শতকে কলকাতা তথা অখণ্ড বাংলার অন্যতম সেরা ফটোগ্রাফারদের তালিকায় নাম খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর। তাছাড়া ব্রিটেনে গিয়েও, ভার্জিনিয়ার মা বাঙালি ঐতিহ্যকে বহন করেছেন, তেমনটাই জানাচ্ছেন উইলিয়াম। তাঁর মতে, লন্ডনে গিয়েও ভারতীয় গহনা এবং জামা-কাপড় পরতেই অভ্যস্ত ছিলেন তিনি।
ইতিহাসের এই অজানা অধ্যায় প্রকাশ্যে আনার সঙ্গে উইলিয়াম এও দাবি করেছেন, ভার্জিনিয়ার মুখের সঙ্গে মিল রয়েছে বাঙালির। এমনকি ভার্জিনিয়া উলফের লেখাতেও সে-যুগের বাংলা সাহিত্যশৈলীর যথেষ্ট মিল রয়েছে। বিশেষত, রবীন্দ্রনাথের লেখনশৈলী নাকি প্রচণ্ডরকম প্রভাবিত করেছিল তাঁকে।
তবে এখানেই শেষ নয়। কয়েক বছরের মধ্যেই ভার্জিনিয়া উলফের বঙ্গযোগ নিয়ে আস্ত একটি গ্রন্থ প্রকাশ করার কথাও চিন্তাভাবনা করছেন উইলিয়াম ডালরিম্পল। সেইসঙ্গে তিনি অনুসন্ধান চালাচ্ছেন, চন্দননগরের সেই ভুলে যাওয়া বাঙালি পরিবারটিরও। উইলিয়ামের গবেষণায় যদি ভার্জিনিয়ার আত্মীয়দেরও সন্ধান মেলে, তাহলে খুলে যাবে এক নতুন ইতিহাসের অধ্যায়…
তথ্যসূত্র :
১. ‘Virginia Woolf is Part Bengali’ – William Dalrymple, Showli Chakraborty, Thespace.ink
২. Kolkata, my ancestors, and me, William Dalrymple, BBC
Powered by Froala Editor