করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টি যেন সরে গিয়েছে অন্য সমস্ত শারীরিক সমস্যা থেকে। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিনের লকডাউনে কোনোরকম রক্ত সংগ্রহ প্রক্রিয়া নেওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো ধুঁকছে দেশের প্রায় সমস্ত ব্লাড ব্যাঙ্ক। সেইসঙ্গে মানুষের মনের মধ্যেও জমা হয়েছে এক ধরনের আতঙ্ক, হয়তো রক্ত দিতে গেলেই সংক্রমণের মুখে পড়তে হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতেই এগিয়ে এলো ব্যাঙ্গালোরের ‘স্বরাজ অভিযান’। রবিবার এই সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়, যাতে সব মিলিয়ে ৭৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রক্ত দান করেন। আর এঁদের বেশিরভাগই বাঙালি এবং পরিযায়ী শ্রমিক।
ব্যাঙ্গালোর শহরের উপকণ্ঠে থুবারাহাল্লি এলাকায় যে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয় সেখানে দাতাদের বেশিরভাগই সারা বছর ধরে নানা রকম সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। জানুয়ারি মাসেই তাঁদের পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল। আর তার কারণ এনআরসি সংক্রান্ত জটিলতা। বাঙালি দেখেই পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল, এঁরা হয়তো বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। নাগরিকত্বের যথাযথ প্রমাণ দেখিয়েও সেই হেনস্থার হাত থেকে মুক্তি মেলেনি। অবশ্য এর পরে হাইকোর্টের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসনকে। আর এই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই এসে গেল লকডাউন। ফলে নির্মাণ প্রকল্প এবং বিভিন্ন কারখানায় কাজ করতেন যেসব শ্রমিক, তাঁরা প্রত্যেকেই রোজগার হারিয়েছেন। এমনকি রেল চলাচল বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরতেও পারেননি বহু মানুষ।
ব্যাঙ্গালোর শহরের কয়েকটি বস্তি মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার বাঙালির বাস। তাঁদের প্রত্যেকের অবস্থাই সংকটজনক। কিন্তু দেশের সংকটের সময় তাঁরাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সবার আগে। স্থানীয় এক শ্রমিকের কথায়, এতদিন তাঁদের কাছ থেকে রক্ত চাননি কেউই। কারণ প্রত্যেকেই ভাবতেন বুঝি পরিযায়ী শ্রমিকদের শরীরে ঠিকমতো ভ্যাক্সিনেশন নেওয়া থাকে না। আর তাই তাঁদের রক্ত নিরাপদ নয়। কিন্তু লায়ন ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং ইন্দিরা গান্ধী ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ যে এখানে এই বৈষম্যের ধারণা রাখেননি, তার জন্য তাঁরা প্রত্যেকেই কৃতজ্ঞ। সেইসঙ্গে এইসব শ্রমিকের কাছে কি সাধারণ মানুষেরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সময় আসেনি? নাকি এখনও বিভেদের সুরেই বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে সামাজিক ঐক্য?
ছবি প্রতীকী
আরও পড়ুন
রোজা ভেঙে রক্তদানে এগিয়ে এলেন যুবক, মানবতার আরও এক দৃশ্য কলকাতায়
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রক্তের ঘাটতি মেটাতে টানা একমাস রক্তদান শিবির, আয়োজনে কলকাতা পুলিশ