x2-১=০। চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়, এই সমীকরণের সমাধান ১ ও -১। কিন্তু সমীকরণটা যদি হয় ‘x2+১=০’? তবে পরিচিত স্বাভাবিক সংখ্যার পরিধি ছেড়ে ঢুকে পড়তে হবে কাল্পনিক সংখ্যার পরিসরে। কেননা কোনো সংখ্যার বর্গ ঋণাত্মক হতে পারে না কখনোই। এবার যদি সমীকরণের ঘাত বাড়িয়ে দেওয়া হয় আরও খানিকটা? শুনেই জটিল লাগছে নিশ্চয়ই? পাশাপাশি, কাল্পনিক সংখ্যার সঙ্গে বাস্তব সংখ্যাকে মিশিয়ে দিলে তো কথাই নেই।
আজ ১২০ বছর আগে কমপ্লেক্স নম্বর বা জটিল সংখ্যার মূল নির্ণয়ের এমনই এক তস্য জটিল সমস্যা উপস্থাপন করেছিলেন জার্মান গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্ট (David Hilbert)। একটি নয়, এমনই বিদঘুটে মোট ২৩টি গাণিতিক ধাঁধাঁ তিনি পেশ করেছিলেন ১৯০০ সালের ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ ম্যাথামেটিক্সের সভায়। সেই তালিকায় ১২তম সমস্যা ছিল এটি। এক শতাব্দী পেরিয়ে এসে যার মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিছু সমস্যা নিয়ে লড়াই চলছে এখনও। আর বাকিগুলিকে সমাধান অযোগ্য হিসাবেই ধরে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এবার হিলবার্টের দেওয়া সেই ১২তম ধাঁধাঁর সমাধান দিলেন এক বঙ্গসন্তান।
শমিত দাশগুপ্ত (Samit Dasgupta)। বিগত প্রায় আড়াই দশক ধরেই হিলবার্টের এই ধাঁধাঁর সমাধানে ডুবে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাঙালি অধ্যাপক। শেষ পর্যন্ত সফল হল তাঁর অক্লান্ত চেষ্টা। সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান জার্নাল ‘কোয়ান্টা ম্যাগাজিন’-এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সেই সমাধান। দেওয়া হয়েছে স্বীকৃতিও। আর তাতেই বেশ শোরগোল পড়ে গেছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানমহলে।
১৯৯৫ সালে মন্টগোমেরি হাই স্কুল থেকে স্নাতকতা করার পর শমিত পড়াশোনা করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। হিলবার্ট প্রবলেমের সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন শমিত। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই অধ্যাপনা শুরু করেছিলেন তিনি। তারপর সান্টা ক্রুজ হয়ে বর্তমানে তিনি কিংবদন্তি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
আরও পড়ুন
ম্যানগ্রোভ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় সেরা বাঙালি আলোকচিত্রী
তবে তাঁর একাধিক শিক্ষক ও সহকর্মীর সাহায্য না থাকলে এই সমাধান নির্ণয় সম্ভব হত না বলেই মনে করছেন কৃতি বঙ্গসন্তান। যাঁদের মধ্যে অন্যতম বেঙ্গালুরু ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেও অধ্যাপক মহেশ কাক্কড়।
আরও পড়ুন
চেনা ওষুধের অচেনা প্রয়োগেই আটকাবে কোভিড, আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে বাঙালিরাও
নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না, মহেশ-শমিত জুটির এই কাজ গণিত জগতে এক নতুন মাইলফলক তৈরি করল। রামানুজন কিংবা হরিশচন্দ্রের পর গণিতশাস্ত্রে এত বড়ো সাফল্য সেইভাবে কোনো ভারতীয়েরই নেই। ২০০৯ সালে কিংবদন্তি স্লোয়ান রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়েছিলেন শমিত। এবার হিলবার্টের ১২তম সমীকরণ সমাধানের জন্য হয়তো আরও বড়ো কোনো পুরস্কার অপেক্ষা করে রয়েছে তাঁর জন্য। বাংলা তো বটেই শমিত-মহেশের এই কৃতিত্ব গোটা ভারতের কাছেই অত্যন্ত গর্বের…
আরও পড়ুন
ছিল না রুটি খাওয়ার টাকাও, আজ বলিউডের অন্যতম তারকা এই বাঙালি
Powered by Froala Editor