Powered by Froala Editor
ফিরে দেখা ২০২০ : বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঙালির যুগান্তকারী অবদান
১/১৩
বিজ্ঞানের জগতে বাঙালির অবদান নতুন নয়। বারবার বিশ্বের সামনে সে-কথা প্রমাণিত হয়েছে। ২০২০ সালেও বাঙালি বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই বিজ্ঞানের জগত ঘটে গিয়েছে একাধিক বাঁকবদল। রইল মহাকাশ গবেষণা থেকে প্রাণ-প্রকৃতি অথবা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তেমনই কিছু যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা...
২/১৩
বিরল মানসিক রোগ পিটিএসডি’র রহস্যোন্মোচন— দুর্ঘটনা, যুদ্ধ, মৃত্যু— এমন কোনো বীভৎসতার সাক্ষী থাকলে মারাত্মক এক মানসিক ট্রমার মধ্যে চলে যান মানুষ। এই রোগকেই বলা হয় পিটিএসডি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিকিৎসা না হলে, এই রোগের স্থায়ী প্রভাব পড়ে যায় মস্তিষ্কে। এই রোগের জন্য দায়ী হরমোন কর্টিজলই ব্যবহৃত হয়ে আসে পিটিএসডি’র ওষুধ হিসাবে। কিন্তু এই বিষে বিষে বিষক্ষয়ের কারণ অজানা ছিল চিকিৎসা জগতে। সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ দত্ত এবং প্রবহণ চক্রবর্তী— এই তিন বাঙালি গবেষক রহস্যোন্মোচন করেন সেই ধাঁধাঁর।
৩/১৩
সূর্যের করোনার মানচিত্র নির্ণয়— সূর্যপৃষ্ঠের উত্তপ্ত ও উজ্জ্বল স্তরকে ঘিরে রাখে এক শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র। সূর্যের মধ্যে চলতে থাকা ক্রমাগত পারমাণবিক বিক্রিয়া এই চৌম্বকক্ষেত্রকে প্রভাবিত করলে, সূর্যপৃষ্ঠ থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসে প্লাজমার স্রোত এবং চৌম্বকক্ষেত্রের অদৃশ্য শক্তিশালী সূচালো শলাকা। যা সৌরঝড়, সৌরঝলক বা সোলার মাস ইঞ্জেকশনের সৃষ্টি করে। এই ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ারই হদিশ দেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী বিদ্যাবিনয় কারক এবং তন্ময় সামন্ত। সূর্যের করোনাকে পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করেন করোনাগ্রাফ যন্ত্র।
৪/১৩
ক্যানসার সনাক্তকরণে কলকাতায় তৈরি ভারতের বৃহত্তম মেডিক্যাল সাইক্লোট্রন— সাইক্লোট্রন যন্ত্রের মাধ্যমে শুধু যে রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যারই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে, এমনটা নয়। খোদ চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যানসারের মতো ভয়ঙ্কর মারণ রোগের সনাক্তকরণেও ব্যবহৃত হয় সাইক্লোট্রন। ফলাফল পেতেই কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে চলতি বছরেই তৈরি হয় ভারতের বৃহত্তম মেডিক্যাল সাইক্লোট্রন যন্ত্র ‘সাইক্লোন ৩০’। উদ্দেশ্য ছিল, দুরারোগ্য টিউমরের দ্রুত হদিশ পাওয়া অত্যন্ত কম খরচে। যুগান্তকারী এই নির্মাণের পিছনে ছিলেন বাঙালি গবেষক বিকাশ সিনহা।
৫/১৩
মানবদেহে ওষুধের প্রভাব সর্বোচ্চ করতে যুগান্তকারী গবেষণা— ওষুধের সঠিক রাসায়নিক গঠনই ঠিক করে দেয় তা কোন অঙ্গে কাজ করবে সঠিকভাবে। কিন্তু তার প্রভাব বা প্রতিক্রিয়ার মাত্রাকেও বদল করা যায় রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন করে। পৃথক পৃথক মানবদেহে আরএনএ, ডিএনএ বা প্রোটিনের সঙ্গে তার বন্ধন গঠন নির্ধারণ করে কার্যকারিতাকে। পাশাপাশি রাসায়নিক গঠনের মাধ্যমেই এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে ওষুধের ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলিকেও। ওষুধের রাসায়নিক গঠন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিশা দেখালেন মুর্শিদাবাদের গবেষক মৈদুল ইসলাম। চলতি বছরে অসামান্য এই কাজের জন্য বাংলায় এসেছিল আন্তর্জাতিক পুরস্কারও।
৬/১৩
শসার খোসা থেকে প্লাস্টিকের বিকল্পের সন্ধান— খাদ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় প্লাস্টিক। যা খাবারে প্রভাব ফেলার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণের জন্যেও অনেকাংশে দায়ি থাকে। খড়গপুর আইআইটির অধ্যাপিকা জয়িতা মিত্র এবং রিসার্চ স্কলার সাঁই প্রসন্ন এই প্লাস্টিকেরই বিকল্প আবিষ্কার করেন শসার খোসা থেকে। শসার খোসার নির্যাস থেকে সেলুলোজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বায়ো-ডিগ্রেডেবল ন্যানো ক্রিস্টাল তৈরি করেন এই দুই গবেষক। যা উচ্চ তাপমাত্রায় দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যকে সংরক্ষণ করতে যেমন সক্ষম তেমনই সম্পূর্ণ বিয়োজ্য হওয়ার কারণে পরিবেশবান্ধবও।
৭/১৩
প্রাথমিক স্তরেই অগ্নাশয়ের ক্যানসারের চিহ্নিতকরণে যুগান্তকারী দিশা— অগ্নাশয়ের সামান্য সমস্যা হলে অনেক সময়ই এড়িয়ে যাওয়া হয় তাকে অথবা ভুল চিকিৎসা করা হয় সাধারণ কোনো রোগ ভেবে। তবে জটিলতা বাড়তে থাকলে পরে গিয়ে দেখা যায় তা ছিল মারণ ক্যানসার। প্রাথমিক স্তরেই এবার এই ক্যানসারকে চিহ্নিত করার নতুন পথ দেখালেন একদল বাঙালি বিজ্ঞানী। অগ্নাশয়ের কোষের ৫টি জিনের পরীক্ষাগত বিশ্লেষণ করেই বলে দেওয়া যাবে ক্যানসারের উপস্থিতি। এমনই বিশেষ এক মার্কার তৈরি করেছেন তাঁরা। কলকাতাতে বসেই। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন গবেষক শ্রীকান্ত গোস্বামী।
৮/১৩
কালাজ্বরের নতুন ওষুধের সন্ধান— সুশান্তশেখর অধিকারী, চিরঞ্জীব পাল, মহম্মদ ইউসুফ এবং দেবারতি মুখোপাধ্যায়— এই চার বাঙালি গবেষকের হাত ধরেই নতুন যুগের সূত্রপাত হতে চলেছে চিকিৎসা জগতে। কালাজ্বরের প্রকোপ বর্তমানে কমে এলেও, প্রচুর ব্যয়বহুল এই রোগের চিকিৎসা। কাজেই একদিকে যেমন খরচ সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনার দরকার ছিল, তেমনই প্রয়োজন ছিল এমন কোনো ওষুধের যার স্বল্প পরিমাণ ব্যবহারেই মিলবে সুফল। ২০১২ সালে এই লক্ষ্যেই শুরু হয়েছিল গবেষণা। ২০২০ সালে ফেরোসেনিলকুইলোনিন নামের সেই ওষুধ প্রস্তুত করে ফেলেন কলকাতার এই গবেষকরা...
৯/১৩
ভূমিকম্প মাপতে নতুন পরিমাপক স্কেল তৈরি বাঙালি বিজ্ঞানীর— ভূমিকম্প বলতেই এতদিন উঠে আসত রিখটার স্কেলের নাম। কিন্তু ৮০ বছর ধরে চলে আসা সেই পরিমাপকই বদলে গেল এবার। লগারিদম স্কেলের ব্যবহার করার কারণে বেশ কিছু গোলযোগ দেখা দিত রিখটার স্কেলে। সেই সমস্যার সমাধান করতেই বেশ কিছু বদল করে নতুন একটি স্কেল তৈরি করেছিলেন বাঙালি গবেষক রঞ্জিত দাস। বাঙালির তৈরি সেই স্কেলই সম্প্রতি মান্যতা পেল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীমহলে। এবার থেকে ভূমিকম্পের পরিমাণ নির্ণয় করা হবে ‘দাস ম্যাগনিচিউড স্কেল’-এর মাধ্যমেই।
১০/১৩
ভেজা কাপড় থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন— দূষণ রুখতে অপ্রচলিত শক্তির প্রয়োজন আবশ্যিক হয়ে উঠছে দিনে দিনে। আর সেই ক্ষেত্রেই অভিনব এক পথের হদিশ দিলেন বাঙালি গবেষক শঙ্খ শুভ্র দাশ। ভেজা কাপড়ের কৈশিকতাকে কাজে লাগিয়েই লবণাক্ত জলের মেরুকরণের মাধ্যমে শক্তির উৎস তৈরি করেন খড়গপুর আইআইটির এই গবেষক। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত বিভব-প্রভেদ খুব বেশি না হলেও তা দিয়ে নিঃসন্দেহে জ্বালানো যাবে এলইডি বাল্ব কিংবা চার্জ দেওয়া যাবে মোবাইল। তবে প্রান্তিক অঞ্চলের চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জামে শক্তির সরবরাহ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে এই যুগান্তকারী আবিষ্কার...
১১/১৩
ড্রাগনফ্লাই ৪৪ গ্যালাক্সিতে ওয়ার্মহোলের সন্ধান— এমন এক গ্যালাক্সি যা তৈরি প্রায় সম্পূর্ণ ডার্ক ম্যাটার দিয়ে। এই গ্যালাক্সির মাত্র ১ শতাংশ পদার্থ থেকে নির্গত হয় আলোকরশ্মি। কাজেই সেই ছায়াপথের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কী রহস্য তা বোঝাই দুষ্কর ছিল বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে। তবে সেই ছায়াপথ থেকে আসা সামান্য আলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ এবং গাণিতিক সমস্যার সমাধানের মাধ্যমেই ওয়ার্মহোলের প্রমাণ দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক ফারুক রহমান এবং সইদুল ইসলাম। আইনস্টাইন ফিল্ড ইক্যুয়েশনের মতে এই পথ দিয়েই কয়েক হাজার আলোকবর্ষের পথ অতিক্রম করা সম্ভব মাত্র কয়েক সেকেন্ডে। বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্রিকা ‘কানাডিয়ান জার্নাল অফ ফিজিক্স’-এ প্রকাশিত হয়েছিল এই গবেষণা...
১২/১৩
মানুষের হৃদপিণ্ডের বিকল্প যন্ত্র তৈরি— কার্ডিওভাসকুলার রেপ্লিকেটর। এমনই এক যান্ত্রিক ব্যবস্থা যা প্রতিস্থাপিত করবে মানুষের হৃদযন্ত্রকে। সেখানে ভাল্বের মাধ্যমেই কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে রক্তের চাপ, প্রবাহমাত্রা এবং অন্যান্য সমস্ত বাস্তব পরিমিতিকে। মানুষের হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা কিংবা সমস্যা বুঝতে যা ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন হিউম্যান হার্টের আচার-আচরণ। তবে এখানেই শেষ নয়, এই ধারণার ওপরে ভিত্তি করেই অত্যন্ত কম খরচেই হৃদপিণ্ডের সম্পূর্ণ বিকল্প যন্ত্রও তৈরি করার গবেষণাও চলছে পুরোদমে। এই উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের জন্য বাঙালি গবেষক সুমন্ত লাহা সম্প্রতি সম্মানিত হয়েছেন জাতীয় পুরস্কারে।
১৩/১৩
বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের নতুন দিগন্ত— প্রায় ৯০ বছরর আগে কাল্পনিক এক মৌলিক কণার তাত্ত্বিক সন্ধান দিয়েছিলেন ইতালিয় বিজ্ঞানী ইতোরে মায়োরানা। যে কণার বিপরীত প্রতিকণা সে নিজেই। বাস্তবে এমন কণার অস্তিত্ব না থাকলেও কৃত্রিমভাবে একমাত্রার সেই কণা ল্যাবরেটরিতে তৈরি করে দেখালেন বাঙালি গবেষক সোমেশ গঙ্গোপাধ্যায়। মায়োরানা ফার্মিয়ন নামের এই কণার মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জগতে আসতে চলেছে বিপ্লব। নতুন ভাষা পেতে চলেছে পদার্থবিদ্যার অবিকশিত শাখা ‘টোপোলজিক্যাল কোয়ান্টাম কম্পিউটিং’। বিশ্বের অন্যতম গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ সম্প্রতি প্রকাশ পায় এই গবেষণা...