আবারও এক নক্ষত্রপতন। বাংলা হারাল কথাসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে। চলে গেলেন কবি, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। গতকাল করোনার উপসর্গ নিয়েই ভর্তি হয়েছিলেন আনন্দপুরের ফর্টিস হাসপাতালে। আজ সন্ধ্যায় সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
প্রয়াত কবি এবং অনুবাদকের জন্ম বাংলাদেশের সিলেটে। ১৯৩৮ সালের ২৫ এপ্রিল। তুলনামূলক সাহিত্য, ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব, ললিতকলার ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি ছাড়াও অধ্যায়ন করেছেন কানাডার টরোন্টো এবং পোল্যান্ডের তাশভি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপনাও করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তাঁর হাত ধরেই বাঙালি পরিচিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের। নিজের ভাষায় চিনেছে লোরকা, বরিস পাস্তেরনাক, মার্কেজ, পিটার বেকসেলের রচনাকে। শুধু কবিতা বা গদ্যই নন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় অনুবাদ করেছিলেন বহু নাটকও। লোরকা, এডোয়ার্ড বন্ড, ভ্লাকোভ হাভেলের নাটকের বাংলা নাট্যরূপ উপহার দিয়েছিলেন তিনি। শিশুসাহিত্যে তাঁর করা জুল ভার্নের গল্পের অনুবাদগুলি উল্লেখযোগ্য সম্পদ। মানচিত্রের সীমারেখা ছাড়িয়ে ভাষার মাধ্যমেই চিনতে শিখিয়ে ছিলেন অন্যান্য দেশ, রাজ্যের ছবি, সেখানকার সংস্কৃতিকে।
শিশু সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন খগেন্দ্রনাথ মিত্র স্মৃতি পুরস্কার। পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কারও। তবে সাহিত্য জনপ্রিয় হলেও, অনুবাদকরা কি গৃহীত হন সেইভাবে পাঠকদের কাছে? যিনি নানা দুর্বোধ্য ভাষা থেকে সাহিত্যের আলো এনে ছড়িয়ে দিয়েছেন পাঠকমহলে। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাকে। অথচ তিনি নিজে থেকে গেছেন আলোচনার অনেকটাই বাইরে। বাংলা পাঠক কতটা স্বীকৃতি দিয়েছে তাঁকে? এই প্রশ্ন থেকেই যায় মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনাড়ম্বর চলে যাওয়া ঘিরে...
Powered by Froala Editor