সূচ শুধু মা-ঠাকুমার সেলাইয়ের বাক্সে নয়, আছে সূর্যেও। আর সেই সূচই নাকি সূর্যের বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে! যা নাকি সূর্যের পৃষ্ট থেকেও অনেক বেশি। বহু বছর ধরে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের খুঁজে চলা এই বিষয়টিই সামনে নিয়ে এল হুগলির এক কৃষক সন্তান, তন্ময় সামন্ত। যেটা নিয়ে বিজ্ঞানীমহল উচ্ছ্বসিত।
কিন্তু এই সূচের ব্যাপারটি আসলে কী? সূচ, বা স্পিকিউলস আসলে বাস্তবিক কোনও সূচালো বস্তু নয়। সরু আকারের জন্য স্পিকিউলস বলা হয় এদেরকে। সূর্যের ক্রোমোস্ফিয়ারে দুটি বিপরীতধর্মী চৌম্বক ক্ষেত্র যখন কাছাকাছি এসে ধ্বংস হয়ে যায়, তখন এই স্পিকিউলস বা সূচের মতো অংশগুলো তৈরি হয়। যা দৈর্ঘ্যে তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্তও হয়। এই স্পিকিউলসগুলিই প্রচুর বেগে সূর্যের বায়ুমণ্ডল বা করোনার দিকে যায়। আর যার জন্য এই তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। সূর্যের পৃষ্ঠে যেখানে তাপমাত্রা থাকে ৬ হাজার ডিগ্রি কেলভিন, করোনাতে সেখানে বেড়ে হয়ে যায় ১০ লক্ষ কেলভিন!
এই স্পিকিউলসের থিয়োরি অবশ্য এসেছিল অনেক আগেই, ১৮৭৭ সালে। কিন্তু সেগুলোর ভূমিকা ঠিক কী, সেটা স্পষ্ট হচ্ছিল না। হুগলির তন্ময় সামন্ত একেবারে হাতে-কলমে সেটাকেই প্রমাণ করলেন। তন্ময়ের জীবনটা শুরু থেকেই ছিল সংগ্রামের। এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের মেধার জোরে জায়গা করে নিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে। তারপর সেখান থেকে ডক্টরেট, পোস্ট ডক্টরেট— এর মধ্যেই এই সূর্যের স্পিকিউলস নিয়ে তাঁর গবেষণা। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘সায়েন্স’-এও তাঁর এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। আপাতত, তন্ময় সামন্তের লক্ষ্য, আরও বড় গবেষণায় এগিয়ে যাওয়া। তার মাঝেই এই খবর, নিশ্চয়ই উৎসাহ দেবে তাঁকে। উৎসাহিত করবে আমাদেরও।