প্রবাসী বাঙালিদের নাট্যোৎসব, মার্কিন মুলুকের বাঙালিয়ানার অনন্য উদযাপন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন শহর (Houston)। সেখানেই এক নাট্যোৎসবের আয়োজন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ। তবে হঠাৎ করে এই বঙ্গভূম থেকে এই উৎসব প্রাঙ্গণে হাজির হলে, চমকে উঠতে হবে যে-কাউকেই। নাট্যোৎসবের পোস্টারে নজর পড়লে ছানাবড়া হবে চোখ। ‘দীপিকা দাশগুপ্ত স্মারক নাট্যোৎসব’। হ্যাঁ, বাংলা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, সুদূর মার্কিন মুলুকে প্রতিবছর আয়োজিত হয় বাংলা ভাষার আস্ত একটি নাট্যোৎসব (Drama Festival)। নেপথ্যে হিউস্টনের প্রবাসী বাঙালি সংগঠন ‘হিউস্টন দুর্গাবাড়ী’।

২০০০ সালে প্রবাসী বাঙালি সংগঠনটির হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এই আশ্চর্য নাট্যোৎসবের পথচলা। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবেই আয়োজিত হয়ে আসছে নাট্যোৎসব। কোভিডকালের সময়টুকুকে বাদ দিলে, এই উৎসবের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি কোনো। এবারেও অন্যথা হল না তার। সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে ধুমধামের সঙ্গেই আয়োজিত হল বাংলা নাটকের এই আসর। প্রদর্শিত হল একগুচ্ছ বাংলা নাটক। আর সেই তালিকায় জায়গা করে দেয় অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প ‘ডাকিনীর ডেরায়’-এর অবলম্বনে তৈরি ‘আদিম’।

অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শুনে অনেকেরই মনে হতে পারে, হয়তো কলকাতা থেকে কোনো নাট্যদল এই নাটক উপস্থাপন করতে হাজির হয়েছিল হিউস্টনে। তেমনটা নয় একেবারেই, বরং এই নাটকটির নেপথ্যে রয়েছেন ডালাসের একটি নাট্যগোষ্ঠী— ‘কথালয়’। অবশ্য নাট্যদলের সমস্ত কুশীলবরাই এপার বাংলার প্রবাসী। 

অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গল্পটিকে নাট্যরূপ দেন ত্রিদিব চক্রবর্তী। নির্দেশনার দায়িত্বও ছিল তাঁর কাঁধেই। অন্যদিকে সঙ্গীতসজ্জার নেপথ্যে ছিলেন প্রত্যূষা বসু। সঞ্জীব বানু, শৌভিক ঘোষ, শ্রেয়সী মিশ্র, ত্রিদিব চক্রবর্তী প্রমুখ শিল্পীদের অভিনয় নাট্যমঞ্চে ফুটিয়ে তোলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উত্তর-পূর্ব ভারতবর্ষের সীমান্তে অবস্থিত ছোট্ট একটি রেলস্টেশনের ছবি, আর সেখানে সভ্য জগতের অগোচরে ঘটে চলা আশ্চর্য সব অলৌকিক ঘটনাদের বৃত্তান্ত। আলো এবং শব্দের ব্যবহার, রেল চলাচলের দৃশ্য ও গল্পের বুনন— সবমিলিয়ে মঞ্চে এক অলৌকিক পরিবেশের জন্ম দেয় ‘আদিম’।

২৭ ও ২৮ মে— দু’দিন ব্যাপী এই নাট্যোৎসবে ‘কথালয়’ ছাড়াও অংশ নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি ভিন্ন ভিন্ন শহরের ৯টি বাঙালি নাট্যদল। বাঙালিয়ানার ছাপ সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে খাবারের মেনুতেও। ফিশফ্রাই, ধোকার ডালনা থেকে শুরু করে মোচার চপ কিংবা শিঙাড়া— সবমিলিয়ে হিউস্টন যেন দু’দিনের জন্য হয়ে উঠেছিল কলকাতারই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Powered by Froala Editor