প্রাথমিক স্তরেই চেনা যাবে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার, বাঙালি চিকিৎসকদের যুগান্তকারী আবিষ্কার

“অধিকাংশ প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের রোগী চিকিৎসার উপযুক্ত সময় পান না। রোগ ধরা পড়তেই অনেকটা সময় লেগে যায়।” বলছিলেন ‘ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর গবেষক শ্রীকান্ত গোস্বামী। কিন্তু কেন এমন হয়? তার উত্তরও দিলেন তিনি। আসলে অগ্ন্যাশয়ের মাথার দিকে মাংসপিণ্ডের স্ফীত হয়ে ওঠা দেখেই বোঝা যায় সেখানে ক্যানসার দেখা দিয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে এমন সম্ভাবনাও থেকে যায় যে, ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসে ভুগছেন রোগী। “এই দুই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে শুধু বিনা চিকিৎসায় নয়, ভুল চিকিৎসায় মারা যান অনেকে।” তবে এই অন্ধকার দিকটা এবার ঘুচে যেতে চলেছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে ডঃ শ্রীকান্ত গোস্বামী এবং তাঁর সহকর্মীদের গবেষণার সূত্র ধরেই।

সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণাপত্র। ডঃ শ্রীকান্ত গোস্বামীর সঙ্গে এই কাজে সহযোগিতা করেছেন তাঁরই প্রতিষ্ঠানের সরোজকান্ত মহাপাত্র এবং সংসিদ্ধি ভট্টাচার্য। এছাড়াও ছিলেন এসএসকেএম-এর চিকিৎসক সুকান্ত রায়, ক্ষৌণীশ দাস, সুজন খামরুই, আর.জি. কর মেডিক্যাল কলেজের সন্দীপ হালদার ও সোমদত্তা লাহিড়ী এবং চিত্তরঞ্জন ন্যাশানাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ইন্দ্রনীল ঘোষ। প্রত্যেকে মিলে খুঁজে বের করলেন একটি বায়োলজিক্যাল মার্কার। যার সাহায্যে খুব সহজেই বোঝা যাবে, অগ্ন্যাশয়ের মাথায় তৈরি হওয়া হেডমাস বিনাইন গোত্রের (অর্থাৎ ক্যানসার নয় এমন), নাকি ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ ক্যানসারাস)?

এই কাজটির জন্য প্রথমে কলকাতার নানা হাসপাতাল থেকে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। তারপর সেই নমুনা থেকে ৫টি জিনের একটি সিগনেচার খুঁজে পেয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও এই জিনগুলো একইভাবে কাজ করে কিনা, সেটাও পরীক্ষা করে দেখতে হয়েছে। তবে সবটাই হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। এখনই এই প্রযুক্তি বাজারে আনার মতো অবস্থায় নেই। ডঃ শ্রীকান্ত গোস্বামী অবশ্য জানাচ্ছেন, “আমাদের গবেষণাপত্র প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তার ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে কিছুটা ধীরে কাজ চলছে।” তবে বাংলায় গবেষণার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই যাঁরা বলেন, তাঁদের সঙ্গে একেবারেই একমত নন তিনি। তাঁরা যে এই পুরো গবেষণাটাই করেছেন কলকাতায় বসে। আর তাঁর নিজের কথায়, “বাংলা সহ ভারতের সব প্রান্তেই তো এমন অনেক গবেষণা চলছে।”

তবে এখনই বাজারজাত না হলেও খুব শিগগিরি যে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের দ্রুত চিহ্নিতকরণ সম্ভব হবে, তাতে সন্দেহ নেই। আর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে একদল বাঙালি চিকিৎসক এবং শহর কলকাতার নাম।

আরও পড়ুন
আবিষ্কারের পরেও পাননি প্রতিষেধক, কালাজ্বরে মৃত্যু সুকুমারের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মাস্ক পরলেও ব্যথা হবে না কানে, চমকপ্রদ আবিষ্কার বর্ধমানের ছাত্রীর