রবীন্দ্রনাথ, অমর্ত্য সেন, মহম্মদ ইউনুস অথবা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়; নোবেল প্রাপকের তালিকায় বাঙালির সাফল্য নেহাত নিন্দাজনক নয়। তবে এর মধ্যেই আরও এক বাঙালির নাম উঠল এবারের নোবেল প্রাপকদের মনোনয়ন তালিকায়। তিনি আমেরিকা প্রবাসী চিকিৎসক ডা. রাহুল আবিদ। তিনি এবং তাঁর অলাভজনক সংস্থা হেল্থ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (এইচএইএফএ) এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন তালিকায় ঠাঁই পেলেন। আর এই মনোনয়ন জমা দিয়েছে বসটনের ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেট।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ডা. রাহুল আবিদ চলে যান জাপানে নাগোয়া ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে মলিকিউলার বায়োলজি এবং বায়ো-কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করে চলে যান আমেরিকা। ২০০১ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পান ফেলোশিপ। সেই থেকে আমেরিকাতেই প্র্যাকটিস করে আসছেন তিনি। কিন্তু দেশের মাটির প্রতি তাঁর টান এক মুহূর্তের জন্যও ছিন্ন হয়নি। আর সেটাই বোঝা যায় তাঁর পরবর্তী উদ্যোগ থেকে।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরেই বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের কর্মীদের দুরাবস্থা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকতে থাকতে শরীরের দিকে নজর দেওয়ার কোনো সময়ই ছিল না তাঁদের। আর নিজেরা চাইলেও, চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। তাঁদের কথা ভেবেই সেবছর এইচএইএফএ তৈরি করেন ডা. আবিদ। ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মীকে আউটডোর চিকিৎসা প্রদান করে এই সংস্থা। ৯ হাজার মহিলা কর্মীর ক্যানসারের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়।
এর মধ্যেই ২০১৭ সাল নাগাদ মায়ানমারের রোহিঙ্গা দাঙ্গার প্রভাব এসে পড়ে বাংলাদেশেও। চট্টগ্রামের কক্সবাজার এলাকায় সেইসব উদ্বাস্তুর জন্যও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন ডা. আবিদ। প্রায় দেড় লক্ষ রোহিঙ্গার প্রতিদিনের হালহকিকতের বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ রেখে চলেছে এইচএইএফএ। সেইসঙ্গে হতদরিদ্র মানুষদের জীবনযাত্রার উন্নতির বিষয়েও সচেতন ভূমিকা রেখেছে তাঁর সংস্থা।
২০১৮ সালে ডা. আবিদের সংস্থা তাঁদের ডিজিটাল টেকনোলজি ‘নিরোগ’-এর জন্য কানাডার গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জেস সংস্থার পক্ষ থেকে পান ‘স্টারস ইন গ্লোবাল হেল্থ’ সম্মান। আর পেয়েছেন অজস্র মানুষের ভালোবাসা। সেখানে নোবেল শান্তি পুরস্কার যে এই কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুঘটকের কাজ করবে, সেকথা বলাই বাহুল্য। আর নোবেল প্রাপকের তালিকায় কি আরেক বাঙালির নাম উঠবে? কিছুদিনের মধ্যেই অবশ্য তার উত্তর পাওয়া যাবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সত্তরের দশক ও কলকাতার রক ব্যান্ড ‘শিবা’ – ম্যানেজমেন্টের জন্য নোবেল পেতেন পিসি মুখার্জি?