“আমি জানতাম, ছবিটা যখন শেষ হবে, তখন একটা কিছু ভালো হবেই। তাঁদের জন্য ভালো লাগল বেশি, যারা এই সিনেমার জন্য অনেক শ্রম দিয়েছে। আর নিজের কাছে সবচেয়ের গর্বের ছিল যে এত বড়ো স্থানে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারব।”
বলছিলেন তরুণ চিত্রপরিচালক সৌরদীপ দত্ত (Souradeep Datta)। তাঁর স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘সাইকেল অফ ইটারনিটি’ (Cycle Of Eternity) সম্প্রতি মনোনীত হয়েছে ২০২৩-এর অস্কার কোয়ালিফাইং রেইনডান্স চলচ্চিত্র উৎসবে (Raindance Film Festival)। ‘স্বাধীন’ চলচ্চিত্রের জন্য যেটি বিশ্বের অন্যতম বড়ো উৎসব। সারা বিশ্ব থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার ছবি জমা পড়ে এখানে। যার মধ্যে থেকে নির্বাচন করা হয় মাত্র চল্লিশটি ছবি। তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি ছবি মনোনীত হয় অস্কার কোয়ালিফাইং প্রতিযোগিতার জন্য। সৌরদীপের ছবিটি স্থান করে নিয়েছে সেই তালিকায়। ভারত থেকে একমাত্র নির্বাচিত হয়েছে তাঁর ছবি। বিশ্বচলচ্চিত্রের অন্যতম বড়ো মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তিনি।
মৃত্যু নয়, যন্ত্রণা নয়—বেঁচে থাকার লড়াইয়ের মধ্যে থেকেই উত্তরণের পথ খুঁজে নেয় জীবন। এই তত্ত্বকে ঘিরে আবর্তিত হয় ‘সাইকেল অফ ইটারনিটি’। চলতে থাকে মৃত্যু থেকে মুক্তির সন্তান। গল্পে এক মৃত মা সন্তানকে খুঁজে পায় গাছের মধ্যে। আর ছোটো মেয়েটি মাকে খুঁজে নেয় কাঠের আলমারিতে। জীবন-মরণের সীমানা ছাড়িয়ে চিরন্তন এক যাত্রার গল্প বলে সিনেমা। যার মধ্যে মিশে যায় উপনিষদের দর্শন। তবে সৌরদীপ কোনো বাহ্যিক আদর্শকে চাপিয়ে দেননি সিনেমায়। বরং খুব কমবয়স থেকেই জীবন ও জগতকে যেভাবে উপলব্ধি করেছেন, সেই পথেই চালিত করেছেন সিনেমাকে। তিনি বলছিলেন,
আরও পড়ুন
জীবনজিজ্ঞাসায় ঘেরা একলা মানুষের গল্প বলে ‘নীহারিকা’
“মৃত্যুযন্ত্রণার দুঃখ সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব খুব সহজেই শেষ হতে পারে না। ভালোবাসা, প্রেম, বেঁচে থাকা, মৃত্যু এইসব অনুভূতিকে আমরা সারাজীবন সামনের দিকে বয়ে নিয়ে চলেছি। মৃত্যুকে ছাপিয়েও একটা সত্তা রয়েছে। যেখানে জীবনকে দেখতে হবে বড়ো করে। মৃত্যুকে কোন দর্শনের মধ্যে দেখলে যন্ত্রণা থেকে উত্তরণ সম্ভব, সেই ভাবনাকে কেন্দ্র করেই সিনেমার শুরু।”
আরও পড়ুন
দেশের বিভিন্ন প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’
প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে এল সিনেমা বানানোর নেপথ্যকাহিনি। প্রতিবন্ধকতা এসেছে প্রচুর। অত্যন্ত স্বল্পসামর্থ্যের মধ্যে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। শীতের দিনের বিভিন্ন মুহূর্তকে ফুটিয়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বন্ধু ও সহকর্মীরা। সিনেমার ভাষাকে পর্দায় রূপ দেওয়ার ভাবনাচিন্তায় কেটেছে বহু বিনিদ্র রাত। যেখানে অভিনয় করেছেন বিশ্বজিৎ দাস, শ্রীতমা দে এবং দেবকন্যা হাজরা। চিত্রগ্রহণ—মানস ভট্টাচার্য, সৃজনশীল পরিচালনা—জগন্নাথদেব মণ্ডল। আগামী ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ছ’টায় লন্ডনের জেনেসিস সিনেমাহলে দেখানো হবে ছবিটি। তারপর নিশ্চয়ই পৌঁছে যাবে বিশ্বের আরো অনেক চলচ্চিত্র উৎসবে, আশাবাদী সৌরদীপ।
সিনেমার খুঁটিনাটি তিনি শিখেছেন নিজের চেষ্টায়। হাতেকলমে কাজ করতে করতেই আয়ত্ত করেছেন নিজের ভাষা। ফার্মেসি পড়ার পাশাপাশি গান, লেখালেখির সঙ্গেও সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আপাতত সিনেমাই তাঁর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সম্মান সঙ্গে নিয়েই নতুন পথচলা শুরু সৌরদীপের। সিনেমাতে তিনি বলেছেন এক ‘জার্নি’-র কথা, আশা করা যায় তাঁর যাত্রাপথও সন্ধান করবে অমরত্বের।
Powered by Froala Editor