ছকভাঙা তথ্যচিত্রে মহারাষ্ট্রের লোককথা, আন্তর্জাতিক সম্মাননা বাঙালি পরিচালকের

কালসুবাই বলতেই ভেসে ওঠে মহারাষ্ট্রের ছবি। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা। কিন্তু শুধুই কি তাই? বৃহত্তর অর্থে, কালসুবাই-এর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে মহারাষ্ট্রের অতিপ্রাচীন এক লোককথা। কালসুবাই শুধু পর্বতশৃঙ্গই নয়, বরং মারাঠিদের পূজিত দেবীও। সেলুলয়েড স্ক্রিনে মহারাষ্ট্রের সেই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস, লোককথাকেই তুলে আনলেন বাঙালি পরিচালক যুধাজিৎ বসু। সম্প্রতি তাঁর তৈরি তথ্যচিত্র ‘কালসুবাই’ জার্মানির ওবারহাউসেন ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে সম্মানিত হল সেরার সম্মানে। জিতে নিল 'গ্র্যান্ড প্রাইজ অফ দ্য সিটি অফ ওবারহাউসেন' পুরস্কার। 

পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের (এফিটিআইআই) শেষ বর্ষের ছাত্র যুধাজিৎ। তৃতীয় বর্ষের পাঠক্রমের একটি প্রোজেক্ট হিসাবে গত বছর এই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন তিনি। 

“তথ্যচিত্রের মধ্যে দিয়ে মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতিকে তুলে আনতে বলা হয়েছিল আমাদের। সেই অনুসন্ধান করতে গিয়েই ভান্ডারদারায় চায়ের দোকানে এক বৃদ্ধের থেকে কালসুবাইয়ের এই গল্পটা জানতে পারি। কালসু মূলত কলি উপজাতি জনগোষ্ঠীর দেবী। ছোট্ট বালিকার রূপে ধরেই তিনি ধরা দিয়েছিলেন এক মেষপালকের কাছে। ওই মেষপালক কন্যারূপে তাঁকে গ্রহণ করেন। সেখান থেকেই এই লোককথার সূত্রপাত।”

আরও পড়ুন
সিনেমা নির্মাণের শেষে মৃত্যু নায়কের, হত্যা-মামলায় অভিযুক্ত প্রযোজক!

বলছিলেন পরিচালক যুধাজিৎ বসু। তবে অন্যান্য তথ্যচিত্রের থেকে একেবারে ভিন্ন ধাঁচে বানানো যুধাজিতের এই ছবি। যে কোনো ডকুমেন্টরিই তৈরি হয় তথ্যের জাল বুনে বুনে। বিভিন্ন আঞ্চলিক মানুষের সাক্ষাৎকারের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যেতে থাকে তার প্রেক্ষাপট। কিন্তু সেই প্রচলিত ধারণাকেই যেন নস্যাৎ করে দিয়েছেন কলকাতার তরুণ পরিচালক। একের পর এক স্থিরচিত্র সাজিয়েই তিনি তৈরি করেছেন ‘কালসুবাই’ তথ্যচিত্রটি। আর তার সঙ্গে গল্পকাহিনির বিবরণ অনন্য করে তুলেছে আবহকে। যুধাজিৎ জানালেন, “আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে ফিকশন আর নন-ফিকশন ছবির বিভেদরেখা। কোথাও গিয়ে যেন একটাই এনটিটি হয়ে যাচ্ছে সবটা। কালসুবাই অনেকটা তেমনই। আমি একটু অন্যভাবে তথ্যচিত্রটি ধরার চেষ্টা করেছি।”

আরও পড়ুন
খুনের অভিযোগ, ছদ্মবেশে পলায়ন ও গ্রেপ্তার; সুশীল কুমারের ঘটনা যেন বলিউডি চিত্রনাট্য

আরও পড়ুন
উদ্বোধন করেছিলেন খোদ সুভাষচন্দ্র, ধ্বংসের পথে বাঙালির প্রথম সিনেমা হল ‘মিত্রা’

তবে এই ইতিহাসই তথ্যচিত্রটির প্রাণকেন্দ্র নয়। একজন উপজাতি দেবী কীভাবে গোটা মহারাষ্ট্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন, কীভাবেই তিনি পৌরাণিক গল্পকথার অংশ হয়ে উঠলেন— সেই রহস্যেরই পিছু নিয়েছেন যুধাজিৎ। বুনেছেন এক অদ্ভুত মায়াজাল। তাতে একাকার হয়ে গেছে অতীত, ইতিহাস, বর্তমান।

২০ মিনিটের এই তথ্যচিত্র এর আগে প্রদর্শিত হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের একটি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালে। এবার জার্মানিতে মিলল আন্তর্জাতিক সম্মাননা। তাছাড়াও অস্ট্রিয়া-সহ একাধিক দেশেই ছবিটির প্রিমিয়ার হবে আগামীতে। তবে মহামারীর কারণেই এখনও ছবিটি পৌঁছে উঠতে পারেনি বৃহত্তর দর্শক মহলের কাছে। এমনকি লকডাউনের কারণে বন্ধ ইনস্টিটিউটও। সবমিলিয়ে এক কঠিন সময়ের সঙ্গেই যেন লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে যুধাজিৎ এবং তাঁর মতো বহু তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালকদের। তবে এসবের মধ্যেও শিল্প যে নিজের ভাষা খুঁজে নেবে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী তিনি…

Powered by Froala Editor

More From Author See More