“আমফানের পর এখনও এদিকে ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। তাই সব খবর ঠিকঠাক পাচ্ছিলাম না। দুদিন আগেই বন্ধু চন্দ্রহাস ফোনে নিশ্চিত খবর দিলেন। আর তারপরেই আজ দেখলাম আমার অ্যাকাউন্টে ফেলোশিপের টাকা এসে পৌঁছেছে।” বাংলার দলিত-সাহিত্যের সীমানাকে আরও খানিকটা প্রশস্ত করে জার্মানির জাঁ-জ্যাকস রুশো ফেলোশিপের তালিকায় এবার উঠে এল মনোরঞ্জন ব্যাপারীর নাম। সম্ভবত তিনিই প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিক হিসাবে এই আন্তর্জাতিক সম্মান পেতে চলেছেন।
দেশবিদেশের নানা সাহিত্যসভায় তাঁকে দেখা যায় গলায় গামছা নিয়ে হাজির হতে। নিজের পরিচয়টাকেই জোর গলায় হাজির করেন তিনি। অবশ্য এর জন্য বিদ্রুপও সহ্য করতে হয়েছে অনেক। কিছুদিন আগেই তিনি প্রহরকে বলেছিলেন, “রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার বা দ্য হিন্দু সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার পরেও কলকাতার কোনো বড়ো পত্রিকায় আমার লেখা ছাপতে চায় না।” সেই সমস্ত লাঞ্ছনার জবাব দিয়েই এবার তাঁর প্রাপ্তির তালিকায় যুক্ত হল আরও একটি পালক।
২০১১ সাল থেকেই প্রতি বছর নানা দেশের সমাজ-রাজনৈতিক তথা জাতি-বর্ণ-লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সাহিত্যিকদের সম্মান জানিয়ে আসছে জার্মানির ‘আকাদেমি স্কুলস সলিটিউড’। “লকডাউনের কিছুদিন আগে রাজস্থানে গিয়েছিলাম। সেখানেই চন্দ্রহাস নামে এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হয়। তিনিই এই ফেলোশিপের জন্য আমার নাম নমিনেট করেছিলেন।” প্রহরকে বলছিলেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। অবশ্য ফেলোশিপ পাওয়ার পরেও তাঁর প্রতিক্রিয়া যৎসামান্য। “দেশের নানা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মান আগেই পেয়েছিলাম। এবার বিদেশ থেকে সম্মান এল। দাদা অনন্ত আচার্য বলছিলেন আমিই নাকি প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিক হিসাবে এই ফেলোশিপ পেলাম। কী জানি! হবে হয়তো।” আসলে দেশভাগের পর নানা জায়গায় ভাসতে ভাসতে অপমান আর লাঞ্ছনাই তাঁর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। শুধু তার মধ্যেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই জারি রেখেছেন। জার্মানির প্রতিষ্ঠানের এই স্বীকৃতি সেই লড়াইকেই খানিকটা মজবুত করবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
‘যাঁরা নিজেদের বামপন্থী বলে দাবি করতেন, তাঁরাই এখন পৈতে বের করছেন’ : মনোরঞ্জন ব্যাপারী