উত্তম-পরবর্তী বাংলা সিনেমার অন্যতম নায়ক তিনি, চলে গেলেন তাপস পাল

সে-বছরই মারা গেছেন উত্তমকুমার। জুলাই মাসে। কয়েকমাস পরে, মুক্তি পেল একটি সিনেমা। ‘দাদার কীর্তি’। পরিচালনায় তরুণ মজুমদার। বাঙালি পেল এক নতুন নায়ককে। ‘ভালোমানুষ’ নায়ক। যিনি পরবর্তী অনেকগুলো বছর শাসন করবেন বাংলা সিনেমাকে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে হয়ে উঠবেন বাংলা সিনেমার অন্যতম নায়ক। তিনি, তাপস পাল। চলে গেলেন মঙ্গলবার ভোরে।

বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেলেন তাপস পাল। দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন শারীরিক অসুস্থতায়। সাম্প্রতিককালে ‘অভিনেতা’র থেকে বেশি চর্চিত হয়েছিল তাঁর ‘রাজনীতিক’ ব্যক্তিত্ব। রাজনীতির জীবনে জড়িয়েছেন একাধিক বিতর্কে, সিবিআই-এর হাতে বন্দিও হয়েছিলেন তিনি। তা নিয়ে ‘অপরাধবোধ’ও কম ছিল না তাঁর। অভিনেতা তাপস পালকে যেন অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছিল রাজনীতিক তাপস পালের ‘বিতর্ক’। মৃত্যু যেন সেই বিতর্ক থেকে আংশিক মুক্তি দিল তাঁকে।

১৯৮০ সালে পা রাখা সিনেমার জগতে। তরুণ মজুমদারের ‘দাদার কীর্তি’ই তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। সেই শুরু। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিত, রঞ্জিত মল্লিক-ময় টলিউড তখন পেয়েছিল এক ‘অন্যরকম’ নায়ককে। এক প্রেমিককে। তরুণ মজুমদার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন যাঁর।

শুধু দাদার কীর্তিই কেন, ‘সাহেব’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ 'গুরুদক্ষিণা' কিংবা ‘উত্তরা’ বা ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ – তাপস পালকে বাঙালি ভুলবে না কোনোদিনই। আশির দশকের নায়কদের মধ্যে তিনি অন্যতম, যাঁর লিপে গেয়েছিলেন স্বয়ং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তবে শুধু বাঙালি অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই নন, মাধুরী দীক্ষিত, রাখি গুলজারের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। পরবর্তীকালে, তাপস পাল-দেবশ্রী রায় বাংলা সিনেমার একটি ‘সফল’ জুটি হিসেবে পরিচিতি পায়। এছাড়াও, সে-সময়কার অনেক নায়িকার বিপরীতেই ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি।

তাপস পাল অনেক বাঙালির কাছেই এক আবেগের নাম। এক ভালোমানুষ বাঙালির চেহারা। দাদার কীর্তি থেকে যার শুরু। পরবর্তীকালের জীবন তাঁর ব্যক্তিগত ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও, পর্দার মানুষটি স্বল্পবাক ‘কেদার’ হয়েই থেকে যাবেন। দাদার কীর্তি ছিল এমনই। সেই কীর্তি ফুরোবার নয়। শুধু, রইলেন না মানুষটি…

More From Author See More

Latest News See More