বাঙালির কাছে বর্ষাকাল আর ইলিশ সমার্থক। কিন্তু করোনা আর আবহাওয়ার জোড়া ধাক্কায় শিকেয় উঠেছে ইলিশের রমরমা। প্রতিবছরের এই সময় যখন বাজারে ছেয়ে যায় কেজি খানেকের ইলিশ। এবারে ৩৫০ থেকে ৫০০ গ্রামের বেশি ইলিশ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছে এবার। তাই বড় ইলিশের স্বাদপূরণ অধরাই থেকে যাচ্ছে এ-বছর বাঙালির।
স্বাভাবিক অবস্থায় মোট ১৯ জন মৎস্যজীবীর দল ট্রলারে করে সমুদ্রে যান ইলিশ ধরতে। মোহনায় ট্রলারের অপেক্ষা করতে হয় একটা গোটা সপ্তাহ। তারপর রুপোলি সম্পদ নিয়ে ফিরে আসেন তাঁরা। কোনো কোনো সময় একটি ট্রলারেই ধরা পড়ে ১৪-১৫ কুইন্টাল ইলিশ। কিন্তু এ বছর ভরা বর্ষাতেও টান পড়েছে সেই ইলিশে। ইলিশ ধরার দুই প্রধানকেন্দ্র কাকদ্বীপ এবং দীঘা থেকে এ বছর হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র ট্রলার অভিযানে গেছে সমুদ্রবক্ষে।
করোনা পরিস্থিতির জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই এখনও আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। তাই বড়ো দল করে সমুদ্রে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না মৎস্যজীবীদের। তার বদলে কুকরাহাটি, রায়চক, কোলাঘাটের মত অঞ্চলে নিজস্ব উদ্যোগেই কেউ কেউ ইলিশ ধরতে যাচ্ছেন। তবে লকবলের অভাবেই সকালে বেরিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে রাতের মধ্যে। সমুদ্রের গভীরে না যাওয়ায় বড় ইলিশ জালে পড়ছে না খুব একটা। পাশাপাশি এও মাথায় রাখতে হচ্ছে যাতে একদম ছোট ইলিশ অর্থাৎ খোকা ইলিশ না ধরা পড়ে। তুলনামূলকভাবে ছোট মাছের ক্ষেত্রে সেভাবে দামও পাচ্ছেন না মৎস্যজীবীরা। ফলে লেগে রয়েছে আর্থিক সংকটও।
অন্যদিকে বাংলাদেশে দীর্ঘ লকডাউনের পরে সমুদ্রে জাল পড়ায় ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। শুধু ১ কেজি ওজনের ইলিশের মণই বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৬ হাজার টাকায়। হিমঘরে জমা হয়েছে টন টন ইলিশের স্তূপ। কিন্তু তিস্তার জল নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের জট এখনও না কাটায় প্রতিদেশি দেশও বন্ধ করেছে রপ্তানি। শেষ গতবছর পুজোর সময়ই বড় পরিমাণ ইলিশ উপহার পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর আবারও বন্ধ হয়েছে পদ্মার ইলিশ আসা। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের এ বছর বেশ আক্ষেপের সঙ্গেই কাটছে বর্ষাকাল, তা আর নতুন করে বলার না। আর এই হাপিত্যেশ সেই করোনার জন্যই...
আরও পড়ুন
কলকাতার বাজারে ঢুকল ইলিশ, রসনা পূর্তির অপেক্ষায় ভোজনরসিকরা
Powered by Froala Editor