করোনার এই বিপর্যয়ের সময় নিজেদের সুরক্ষিত রাখাটা সবার আগে দরকার। ঘরের মধ্যে থাকা তো জরুরি; সেইসঙ্গে যদি কখনও বেরনোর প্রয়োজন হয় তখন অবশ্য করেই মাস্ক আর স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত। এই যাবতীয় কথা এই কদিনে ভালো মতো জেনে গেছি আমরা। প্রযুক্তির মাধ্যমে করোনার সমস্ত খবর ও অন্যান্য কাজ সামলাচ্ছি সবাই। ধরুন, এই মাস্ক আর প্রযুক্তি একসঙ্গে মিশে নতুনভাবে আমাদের সামনে এল। কথাটা অদ্ভুত লাগছে? ঠিক এই অদ্ভুত জিনিসটিই করেছেন একজন বঙ্গসন্তান। তাঁর গবেষণায় আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে নতুন ‘বৈজ্ঞানিক’ মাস্ক। যাকে কিনা প্রয়োজনে ‘চার্জও’ করা যাবে!
ব্যাঙ্গালোরের ন্যানো অ্যান্ড সফট ম্যাটার সায়েন্সের (সিইএনএস) বিজ্ঞানী ডঃ প্রলয় সাঁতরার মস্তিস্কপ্রসূত এই মাস্ক। আপাতত এর নাম রাখা হয়েছে ‘ত্রিব ই’ (Tribo E) মাস্ক। প্রলয়বাবুর সঙ্গে এই গবেষণায় ছিলেন ডঃ আশুতোষ সিং এবং অধ্যাপক গিরিধর কুলকার্নি। নাম শুনে বেশ গুরুতর কঠিন ব্যাপার মনে হলেও, আসলে স্কুল কলেজে পড়ানো পদার্থবিদ্যার প্রাথমিক পাঠ থেকেই এটিকে তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই আসে চার্জ দেওয়ার প্রসঙ্গটিও।
ছোটবেলায় স্কুলে স্থির তড়িৎবিজ্ঞান নিয়ে আমরা পড়েছি। সেই বিষয়টিকেই এই মাস্ক তৈরিতে কাজে লাগানো হয়েছে। দুটি অপরিবাহী বস্তুর পারস্পরিক ঘর্ষণের ফলে যে চার্জ উৎপন্ন হয়, তার ফলেই স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয়। শীতকালে চুল আঁচড়াতে গেলে যা নজরে আসে। ঠিক এই বিজ্ঞানকেই মাস্কে ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত দুটি পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। একটি হল পলিপ্রোপাইলিন, অন্যটি নাইলন। পলিপ্রোপাইলিনের দুটি স্তরের মাঝে নাইলনের একটি ছোট্ট কাপড় রাখা থাকবে। এই কাপড়টি নিজেদের ঘর থেকেও নিয়ে নিতে পারি আমরা। দুটি স্তরের মাঝে এই কাপড়টিকে রেখে ঘষলে চার্জ উৎপন্ন হবে। সেই চার্জই জীবাণু সংক্রমণ হতে বাধা দেবে। একে মাস্ক হিসেবে প্রতিরোধব্যবস্থা তো থাকছেই, সেইসঙ্গে চার্জ উৎপন্ন হবার ফলে সেই প্রতিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, স্থির তড়িৎ আমাদের কাছে যত কমই হোক না কেন, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিসাধনের জন্য যথেষ্ট।
এইভাবেই বিজ্ঞানকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করে এই মাস্ক তৈরি করা হয়েছে। মাস্কটিকে পরিষ্কারও করা যাবে। বারবার ব্যবহারেও কোনো সমস্যা নেই। তবে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা এই মাস্ক ব্যবহার করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন ডঃ প্রলয় সাঁতরা। এখন অপেক্ষা শুধু বাজারে আসার।