পিকনিক স্পটে বটগাছের ঝুরি সংরক্ষণ, অভিনব উদ্যোগ বাংলার পরিবেশ কর্মীদের

বুড়ো বটগাছকে ঘিরে যেমন এক জটিল বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে, তেমনই তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একটি ইতিহাস। এলাকাকে ঘিরে মানুষের বসবাসের ইতিহাস। কিন্তু তার সংরক্ষণের কথা আর কতজনেই বা ভেবে দেখেছি? বরং মানুষের উৎপাতে ক্রমশ তার অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়ে। তবে এর মধ্যেই নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি। ২০১৬ সাল থেকেই হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার এই এলাকায় বটগাছ সংরক্ষণের কাজ করে চলেছে এই সংগঠন।

৬ সেপ্টেম্বর, রবিবার চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন মহিষরেখা পিকনিক স্পটে একটা প্রাচীন বটগাছের পাঁচটি ঝুরি সংরক্ষণ করলেন মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতির সৈকত পাত্র, আকাশ পাত্র, বিশ্বজিৎ পাল, বিশ্বজিৎ দেঁড়িয়া, প্রিয়াঙ্কা শাসমল, সুবীর স্বর্ণকার। ঝুরি সংরক্ষণের বিষয়টা একটু অন্যরকম। গাছের ডাল থেকে নেমে আসা ঝুরি যাতে নির্বিঘ্নে মাটিতে নেমে স্তম্ভমূল গঠন করতে পারে, তাই তার চারিদিকে ঘিরে দেওয়া হয় বাঁশের বর্ম। বোটানিক্যাল গার্ডেনে এমন দৃশ্য দেখা গেলেও গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা বটগাছদের এভাবে সংরক্ষণ করার দৃশ্য সত্যিই নতুন। “ঝুরি নেমে স্তম্ভমূল গঠন করতে না পারলে তার মোটা ডাল ভেঙে পড়ে। আর এতে গাছকে ঘিরে বেঁচে থাকা পাখি, পিঁপড়ে, বেজি – এইসমস্ত প্রাণীরাও বিপদের মুখে পড়ে।” বলছিলেন সমিতির সম্পাদিকা জয়িতা কুণ্ডু কুঁতি।

আরও পড়ুন
বাংলার ঐতিহ্য সংরক্ষণে তৎপর সরকার, বদল আনা হচ্ছে পুরনো সংরক্ষণ আইনেও

২০১৫ সালে তৈরি হয় মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি। তখন থেকেই প্লাস্টিক দূষণ, শব্দদূষণ সহ নানা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করে চলেছেন তাঁরা। আর এই কাজে মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া পেয়েছেন বলেও জানালেন জয়িতা। ২০১৬ সাল থেকে প্রথম বটগাছের ঝুরি সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছিলেন। সেই থেকে এখনও অবধি ৪টি গাছের ঝুরি সংরক্ষণ করেছেন তাঁরা। এর কোনোটা গ্রামের ছেলেমেয়েরা খেলতে গিয়ে ছিঁড়ে ফেলত, কোনোটা গরুর মুখে নষ্ট হত। মহিষরেখা পিকনিক স্পটের এই গাছের নিচে আগুন জ্বালিয়ে রান্না হত। আর তার ফলেই ঝুরিগুলি নষ্ট হচ্ছিল বলে জানালেন জয়িতা।

আরও পড়ুন
সংরক্ষণ করতে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেল সতেরো শতকের তৈলচিত্র, ক্ষোভ স্পেনে

“বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পর মাত্র বছর দেড়েকের মধ্যে সরু ঝুরি থেকে কীভাবে মোটা স্তম্ভমূল তৈরি হয়, সেটা সত্যিই অবাক করে।” বলছিলেন জয়িতা। আর এই প্রক্রিয়া যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে তো নজর রাখতে হবে আমাদেরই। গাছের নিচে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া বা অকারণে গাছকে বিরক্ত করলে বাস্তুতন্ত্র যেমন বিঘ্নিত হয়, তেমনই তার প্রভাব এসে পড়ে মানুষের উপরেও। “শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই তো হবে না, গাছ যাতে নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকতে পারে তার ব্যবস্থাও করতে হবে আমাদেরই।” সমাজের কাছে এই বার্তাই দিতে চান মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতির সদস্যরা।

Powered by Froala Editor