সময়টা উনিশ শতকের শেষদিক। সাম্রাজ্যবাদের প্রথম ধাক্কা এসে পড়েছে ইউরোপের বুকে। কৃষি অর্থনীতি বদলে যেতে শুরু করেছে। একটু একটু করে বাণিজ্যিক ক্ষমতা বিস্তারের ক্রীড়নক হয়ে উঠছেন কৃষি-শ্রমিকরা। হ্যাঁ, এতদিন যাঁরা কৃষক বলে পরিচিত ছিলেন, তাঁরাই হয়ে উঠলেন কৃষি-শ্রমিক। যদিও পুরুষদের বেশিরভাগই কারখানায় কাজ করেন। চাষের মাঠের দেখাশোনা তাই মহিলাদের দায়িত্বেই। সময়টা বদলাচ্ছিল। ক্রমশ ক্ষোভ জমছিল মানুষের মনে। আর ঠিক এইসময় মাঠে কাজ করতে করতে ইতালির মহিলারা রচনা করে ফেললেন একটি গান। ‘বেলা চাও’, অর্থাৎ ‘হে সুন্দর, বিদায়’।
কবে কার কথায় এই গানের জন্ম, জানা যায় না। কিন্তু সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের মন্ত্র হয়ে উঠেছে ‘বেলা চাও’। সেটা চল্লিশের দশকের ইতালির গৃহযুদ্ধ হোক বা রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে চেক প্রজাতন্ত্রের মুক্তির সংগ্রাম। বারবার উচ্চারিত হয়েছে ‘বেলা চাও’। আর এবার সেই গানই দিল্লির কৃষক আন্দোলনের মন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল। সৌজন্যে পাঞ্জাবের শিল্পী পূজন সাহিল। দিন দুয়েক আগে তিনিই গানটি পাঞ্জাবি অনুবাদে রেকর্ড করেন। আর তারপর কৃষক আন্দোলনের টুকরো টুকরো ছবি জুড়ে জুড়ে তৈরি করলেন একটি ভিডিও। সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে উঠেছে সেই গান।
কিছুদিন আগেই বেলারুশে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন চলাকালিন নতুন করে উঠে আসে ‘বেলা চাও’। আর তার সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে লাল রঙের জাম্পস্যুট এবং দালি মাস্ক। আসলে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘মানি হাইস্ট’ থেকেই নতুন করে তৈরি হয়েছে এই যোগসূত্র। সেখানে প্রোটাগনিস্ট তাঁর ঠাকুর্দার কাছ থেকে গানটি শিখেছিলেন। আর তাঁর ঠাকুর্দা ছিলেন ইতালির গৃহযুদ্ধের সময় ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী। উনিশ শতক থেকে দুই বিশ্বযুদ্ধ পেরিয়ে বিশ্বায়নের যুগ পেরিয়ে এসেছি আমরা। সময় বদলেছে। বদলেছে শোষণের চরিত্র। কিন্তু শোষণ আজও বাস্তব। আর এই বাস্তবের হাত থেকে মুক্তির জন্য মানুষ একই মন্ত্রে আশ্রয় নিচ্ছেন বারবার। শোষণহীন সমাজের স্বপ্নটা যে একইরকমভাবে বেঁচে আছে।
Powered by Froala Editor