অত্যাচার সহ্য করতে করতেই একসময় ভেঙে যায় বাঁধ। দুর্বলতা, ভয় পরিণত হয় আন্দোলনের আগুনে। মানুষ আর গ্রেনেডের মধ্যে তফাৎ থাকে না কোনো। বিক্ষোভে ফেটে পড়া অগ্নিগর্ভ বেলারুশ এই গল্পই বলছে এখন। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে সমগ্র দেশ।
গত রোববার বেলারুশে ছিল প্রেসিডেন্টের নির্বাচন। দীর্ঘ ২৬ বছরের নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসক লুকাশেঙ্কোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন স্বেতলানা তিখানোভস্কায়া। বলাই বাহুল্য, গত দু’বারের মতই এবারও শান্তিপূর্ণ হয়নি। পরতে পরতে জড়িয়ে ছিল পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতি। সে কথা স্বীকার করেছে ইউরোপিয়ান নেশন এবং যুক্তরাষ্ট্রও। নির্বাচনে বিজয়ী হিসাবে ঘোষিত হয় লুকাশেঙ্কোর নাম। আর তারপরেই জ্বলে ওঠে বেলারুশ। স্বেতলানাকে জয়ী ঘোষণা করার জন্য রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। চলতে থাকে পুলিশের অত্যাচার, লাঠিচার্জ, গ্রেনেড বিস্ফোরণ। তবে পিছিয়ে আসেননি বেলারুশের মানুষ।
এখনও অবধি জেলে বন্দি রয়েছেন ৬৭০০ মানুষ। পুলিশের ভ্যানেই অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছেন দুই যুবক। লুকাশেঙ্কো প্রশাসনের পুলিশের মূল লক্ষ্যই এখনও যুবকরা। শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকেই অল্পবয়সী যুবকদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ক্রমশ শহর থেকে গ্রাম এবং শহরতলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে এই বিক্ষোভ। পুলিশের রাবার বুলেটের জবাবে বেলারুশের পথ-ঘাট কাঁপছে ‘গেট আউট’ শব্দে।
তবে বৃহস্পতিবার প্রতিবাদের একেবারে অন্য চেহারা দেখল বেলারুশ। দল বেঁধে পথে নামলেন মহিলারা। গড়ে তুললেন মানব-প্রাচীর। সারা পোশাক আর হাতে ফুলের তোড়া। পৃথিবী সাক্ষী থাকল এক অনন্য অধ্যায়ের। মিনস্ক, ইনডিপেনডেন্স অ্যাভিনিউয়ের গাড়ির আওয়াজ তখন চাপা পড়ে যাচ্ছে মুক্তির দাবিতে। প্রিয়জন, সহ-আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবি। এই প্রতিবাদের জেরেই পুলিশ মুক্তি দেয় মিনস্কের উত্তর জেলের বেশ কিছু বন্দিদের।
আরও পড়ুন
বেইরুটের বিস্ফোরণে উত্তাল লেবানন, প্রতিবাদীদের দাবি মেনে পদত্যাগ সরকারের
তবে এখনও গরাদের আড়ালে বহু মানুষ। সকলকে মুক্তি না দিলে এই আন্দোলন চলবে বলেই জানাচ্ছেন বেলারুশীয়রা। তবে এরই মধ্যে প্রেসিডেন্টের পদপ্রার্থী স্বেতলানাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে বাধ্য হয়েই। কার্যত নেতৃত্বহীন অবস্থাতেই চলছে বেলারুশের এই আন্দোলন। যা বারে বারে বুঝিয়ে দিচ্ছে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি রাখা যায় না। লুকাশেঙ্কোর সিংহাসন যে টলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর শেষ কোথায় তা অজানা এখনও...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
স্বৈরাচার ঘুচিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি, ইউরোপের শেষ ‘ডিক্টেটরশিপ’-এর বিরুদ্ধে চলছে আন্দোলন