বিস্ফোরণের ক্ষত এখনও দগদগে লেবাননে। বেইরুট বন্দরের বিস্ফোরণে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলির ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। সে ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছিল ইউনেস্কো। বৃহস্পতিবার এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলির রক্ষায় সমস্তরকম সাহায্য এবং রক্ষণে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা নিজস্ব প্রতিবেদনে ঘোষণা করল জাতিসংঘের এই সাংস্কৃতিক সংস্থা।
বিস্ফোরণের প্রভাব অনুভূত হয়েছিল লেবাননের সারা রাজধানী জুড়েই। তবে বন্দরের অনতিদূরে অবস্থিত মার-মিখাইল এবং জেমাইজে অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবথেকে বেশি। কারণ এই দুই অঞ্চলে যেমন জনঘনত্বের আধিক্য রয়েছে। তেমনই রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন বহু নির্মাণ।
লেবাননের সংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রধান সারকিস খোউরে জানান, ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলির সংরক্ষণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে পুনর্নিমার্ণের কার্যক্রম শুরু হবে শীঘ্রই। পাশাপাশিই তিনি জানান, আন্তর্জাতিক সংস্থার উল্লেখযোগ্য সাহায্যের কথাও। প্যারিস কেন্দ্রিক একটি সংস্থার সঙ্গে অনলাইন বৈঠকে তিনি জানান, ৪ তারিখের বিস্ফোরণে লেবাননে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ৮ হাজার বাড়ি।
ইউনেস্কোর সমীক্ষা জানাচ্ছে, এই ৮ হাজারের মধ্যে ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’শো। যার মধ্যে অন্তত ৬০টির অবস্থা আশঙ্কাজনক। সম্ভাবনা রয়েছে ভেঙে পড়ার। রয়েছে বেইরুটের জাতীয় মিউজিয়াম, সারসক মিউজিয়াম, আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম, নানান ধর্মস্থল, সাংস্কৃতিক সৌধ এবং গ্যালারিও।
আরও পড়ুন
বেইরুটের বিস্ফোরণে উত্তাল লেবানন, প্রতিবাদীদের দাবি মেনে পদত্যাগ সরকারের
তবে বিস্ফোরণের আগে থেকেই এই স্থাপত্যগুলির স্বাস্থ্যের অবস্থা ছিল বেশ সংকটজনক। দীর্ঘ দিন থেকেই উঠছিল রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির অভিযোগ। বিস্ফোরণের ফলে কার্যত শিরে সংক্রান্তি দশা এই প্রাচীন ঐতিহ্যগুলির। পাশাপাশিই শরতে বেইরুটে বৃষ্টির পরিমাণ থাকে বেশ ভালো মাত্রায়। বর্ষা ঢোকার আগেই এই স্থাপত্যগুলির রক্ষণাবেক্ষণ না হলে বড়োসড়ো ক্ষতির মুখে পড়তে হবে লেবাননকে। এমনটাই উঠে এসেছে ইউনেস্কোর সমীক্ষায়।
আরও পড়ুন
তীব্রতায় হিরোশিমার প্রায় ২০ শতাংশ, বেইরুটের বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত লেবাননের খাদ্যভাণ্ডারও
উল্লেখ্য বেইরুট বন্দরের গুদামে নাইট্রেটের ব্যাপারের বহুবার সতর্ক করার পরেও সরকার সেইভাবে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। বেইরুটের এই বিস্ফোরণের পিছনেও রয়েছে গাফিলতির চিহ্ন। এই বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে ১৭১ মানুষের। বিস্ফোরণের পরেই বিক্ষোভে জ্বলে উঠেছিল বেইরুট। আন্দোলন চলছিল এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলির রক্ষার স্বার্থে। প্রতিবাদের মুখে পদত্যাগ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী হাসান দায়িব। তবে ঐতিহ্যরক্ষার ক্ষেত্রে ইউনেস্কোর এগিয়ে আসা এবং লেবাননের কর্মসূচিগ্রহণ, সেই বিক্ষোভেরই সাফল্য। এখন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আবার নতুন করে গুছিয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে লেবানন...
আরও পড়ুন
ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে তছনছ লেবাননের রাজধানী বেইরুট, মৃত ৫০, আহত হাজারেরও বেশি
Powered by Froala Editor