মানুষ নয়, প্রথম সফল মহাকাশভ্রমণের কৃতিত্ব দুই বানরের!

১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল। প্রথমবারের জন্য মহাকাশে পৌঁছাল মানুষ। রাশিয়ার ভিসটক-১ মহাকাশযানে চেপে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করলেন ইউরি গ্যাগারিন। সেই শুরু মানুষের বহির্বিশ্ব অভিযান। তবে বিগত ছ’ দশকে অনেকটাই বদলে গেছে পরিস্থিতি। বিজ্ঞান অনুসন্ধান তো বটেই পাশাপাশি মহাকাশভ্রমণকে কেন্দ্র করে বিলিয়নেয়ার উদ্যোগপতিদের হাত ধরে গড়ে উঠতে চলেছে আস্ত পর্যটন শিল্প। আমাজন কর্ণধার জেফ বেজোস এবং ভার্জিন অধিকর্তা রিচার্ড ব্র্যানসন ব্যক্তিগত স্পেসশিপে চড়ে মহাকাশভ্রমণ করে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। আর সেই প্রেক্ষাপট ঘিরেই জয়জয়কার মানব সভ্যতার। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, মহাকাশজয়ের প্রথম কৃতিত্ব কিন্তু মানুষের নয়। সর্বপ্রথম প্রাণী হিসাবে সফলভাবে মহাকাশজয় করেছিল মানুষেরই পূর্বসূরি। বানর!

হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। বানর। ১৯৫৯ সালের ২৮ মে, জুপিটার মিশাইলে চেপে ভার্জিনিয়া থেকে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল বেকার এবং অ্যাবেল নামের দুটি বানর। পেরুর বানর বেকার ছিল স্কুইরেল মাঙ্কি প্রজাতির। অন্যদিকে অ্যাবেল ছিল রেসাস প্রজাতির। অবশ্য প্রথম প্রাণী হিসাবে মহাকাশভ্রমণের কথা উঠলেই প্রথমেই সামনে আসে সোভিয়েতের কুকুর লাইকার নাম। কিন্তু, মহাকাশভ্রমণ করলেও বাঁচতে পারেনি লাইকা। ওভারহিটিং বা অ্যাসফিক্সিশনের কারণে মৃত্যু হয় লাইকার। আর সেই জায়গাটাতেই জিতে গিয়েছিল অ্যাবেল ও বেকার।

তার আগে অবশ্য একাধিক প্রাণীকে মহাকাশে পাঠিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে বানর, কুকুর, ইঁদুর, বেড়াল, কাঠবিড়ালি-সহ ছিল শতাধিক প্রজাতি। এমনকি অ্যাবেল ও বেকারের সঙ্গেই পাঠানো হয়েছিল মাছি, লার্ভা এবং সি-আর্কিনের ডিম। কিন্তু বহির্বিশ্বভ্রমণের পর বেঁচে থাকতে পারেনি কেউ-ই। সকলেরই মৃত্যু হয় যাত্রাপথে কিংবা পৃথিবীতে অবতরণের মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই। তবে সেই রীতি ভেঙে ইতিহাস তৈরি করেছিল নাসার বানরযুগল। 

ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬০ মাইল দূরের কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছিল অ্যাবেল ও বেকার। মহাশূন্যে অতিক্রম করেছিল প্রায় ১৭৭০ মাইল পথ। যা তৎকালীন সময়ের হিসাবে রেকর্ডই। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল, উৎক্ষেপণের সময় অভিকর্ষের থেকে প্রায় ৩৮ গুণ বল সহ্য করেছিল নাসার বানরদ্বয়। 

আরও পড়ুন
মহাকাশ-ফেরত ধানের চাষ চিনে, ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট মেটাবে এই ‘স্বর্গীয় চাল’

পৃথিবীতে সুস্থভাবে অবতরণ করলেও, মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যু হয় অ্যাবেলের। মহাকাশ ভ্রমণের আগে পরীক্ষামূলকভাবে তার শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছিল ইলেকট্রোড। সেই ইলেকট্রোড বার করার জন্যই পৃথিবীতে ফেরার চারদিন পর অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল অ্যাবেলের। কিন্তু মহাকাশভ্রমণের ধকল সহ্য করতে পারলেও অ্যানেস্থেটিকের ডোজের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি অ্যাবেল। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তার। তবে সফল হয়েছিল বেকারের অপরেশন। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ভার্জিনিয়াতেই বেঁচে ছিল সে। 

আরও পড়ুন
নিজস্ব সংস্থার রকেটে চড়েই মহাকাশ-পর্যটন রিচার্ড ব্র্যানসনের

তবে শুধু মহাকাশজয়ী হিসাবে নয়, সেলুলয়েড পর্দাতেও ছাপ রেখে গিয়েছিল অ্যাবেল। ‘নাইট অ্যাট দ্য মিউজিয়াম’ চলচ্চিত্রে দেখা গিয়েছিল তাকে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিও তথ্যচিত্র বানিয়েছিল মহাকাশজয়ী দুই বানরকে নিয়ে। তাদের জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়েনি আজও। আলাবামার হান্টসভিলে মহাকাশজয়ী দুই বানরের সমাধিক্ষেত্রে এখনও নিয়ম করেই হাজির হন বহু মানুষ। ‘নায়ক’-কে উৎসর্গ করে রেখে আসেন কলা। 

আরও পড়ুন
কল্পনার পর সিরিশা, ১৮ বছর পর আবার মহাকাশযাত্রায় ভারতীয় মহিলা

আজ মহাকাশভ্রমণ নিতান্তই মামুলি ঘটনায় পরিণত হয়েছে মানুষের কাছে। চলছে মঙ্গলে উপনিবেশ তৈরির পরিকল্পনাও। কিন্তু অ্যাবেল আর বেকার সেদিন সফলভাবে পৃথিবীতে না ফিরলে হয়তো আজও মানুষের কাছে অধরা থেকে যেত মহাকাশ…

Powered by Froala Editor

More From Author See More