একসঙ্গে বসে রয়েছে জনা চল্লিশেক গাধা (Donkey)। আর তাদের সামনে হোম থিয়েটারে বাজছে বিথোভেনের সিম্ফোনি (Beethoven’s Symphony)। বিথোভেনের সিম্ফোনি শুনতে ওরা খুব ভালোবাসে, এমনটাই বলছেন তুরস্কের মারদিন শহর কর্তৃপক্ষের কর্মচারীরা। দৃশ্যটা হঠাৎ অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু কর্মচারীদের সুস্থ পরিবেশের বিষয়টাও তো কর্তৃপক্ষকেই দেখতে হবে। মানুষ না হলেও তাদের সরকারি কর্মচারী বলেই মনে করে শহর কর্তৃপক্ষ। ৮ ঘণ্টা কাজের মাঝখানে গাধাদের জন্য টিফিনের ব্যবস্থাও আছে। আর কাজ শেষে ঘণ্টাচারেকের বিনোদনের ব্যবস্থাও করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেন এমন ব্যবস্থা? জানতে গেলে মারদিন শহরের ইতিহাসটা জানা প্রয়োজন।
প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার শহর মারদিন। অবশ্য এরপর বেশ কয়েকশো বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে সেই শহর। মধ্যযুগ থেকে আবার মানুষের বসতি গড়ে উঠতে থাকে। বর্তমানে অন্তত ৬০ হাজার মানুষ থাকেন এই শহরে। অন্তত ৫০০ বছর ধরে শহরের আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করে আসছে গাধার দল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মনুষ্যেতর প্রাণীদের দিয়ে এমন কাজ করানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল বহু পশু অধিকার সংস্থা। মারদিন কর্তৃপক্ষও এই রীতি বন্ধ করার চেষ্টা করে। আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য ছোটো ছোটো গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এত প্রাচীন শহরের প্রাচীন রাস্তাঘাটের, বিশেষ করে ছোটো গলি থেকে আবর্জনা সংগ্রহে নানা সমস্যা তৈরি হতে থাকে। তাই শেষ পর্যন্ত আবারও গাধাদের দিয়ে কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এবার তাদের কর্মচারীর স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবা হয়। সেইসঙ্গে পশু অধিকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেয় কর্তৃপক্ষ।
মোটামুটি ৬ বছর বয়সী গাধাদের সাফাইকর্মী হিসাবে নিয়োগ করা হয়। প্রথম প্রথম তাদের পথ চেনানোর জন্য কিছু মানুষও থাকেন। তবে গাধারা এমনিতে বেশ বুদ্ধিমান প্রাণী, এমনটাই মনে করেন মারদিন শহরের মানুষ। আর তাই কিছুদিন পর থেকে তারা নিজে নিজেই রাস্তা চিনে আবর্জনা সংগ্রহ করে আনতে পারে। এমনকি তাদের কাজের সময়ের বিষয়েও সচেতন তারা। ৪ ঘণ্টা কাজ করার পর নিজেরাই ১ ঘণ্টা টিফিন বিরতি নেয়। আবার ১ ঘণ্টা কাজ করে ফিরে আসে আস্তাবলে। সেখানে তাদের বিনোদনের জন্য নানারকমের ক্লাসিক্যাল মিউজিকের বন্দোবস্ত থাকে। এর মধ্যে বেঠোভেনের সিম্ফোনি শুনতেই সবচেয়ে ভালোবাসে তারা। ৮-৯ বছর কাজ করার পর আসে অবসর নেওয়ার সময়। তখন তাদের জন্য বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। তবে গাধাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে কেক একেবারেই ভালো নয়। তাই তরমুজ দেওয়া হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। রয়েছে পেনসনের ব্যবস্থাও। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা এবং মানবিকতার এমন মেলবন্ধন সত্যিই আশ্চর্য করে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নিজেই নিজেকে জঙ্গলের মধ্যে খুঁজে বেড়ালেন তুরস্কের ব্যক্তি!