অবশেষে অপেক্ষা ফুরনোর পথে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকেই চাকা গড়াচ্ছে আইপিএলের। সেই ক্রীড়াসূচি প্রকাশ্যে এল এবার। তবে এবার এই আয়োজন, সমারোহ ভারতের বাইরেই। দুবাইয়ে। ২০১৪ সালের ৬ বছর পর আবার মরুশহরে আয়োজিত হচ্ছে এই টুর্নামেন্ট। এবছর আইপিএলের শুরু মুম্বাই বনাম চেন্নাইয়ের ম্যাচ দিয়ে। কলকাতার খেলা শুরু হবে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে। তবে নক-আউট পর্যায়ের সূচি এখনও অবধি সামনে আনেনি কর্তৃপক্ষ। শুধু জানিয়ে রেখেছে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১০ নভেম্বর।
তবে ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ ছিল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। সেই দিক থেকে এই টুর্নামেন্ট নিরাপদ তো দুবাইয়ে? প্রাথমিক দিক থেকে দেখতে গেলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দেশের থেকে অনেক অনেকটা কম আরব আমিরশাহিতে। পাশাপাশি, বিসিসিআইয়ের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে বিদেশি খেলোয়াড়দেরও আনাও সম্ভব হত না। তবে প্রতিপত্তিশালী এই দেশে আইপিএলের আয়োজন বড়ো বিপদ ডেকে আনতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথাই আগে থেকে জানিয়েছেন আইপিএল স্পট-ফিক্সিংয়ের পিটিশনার আদিত্য ভার্মা।
আরবের তিনটি পৃথক শহরে তিনটি পৃথক বায়ো-বাবল তৈরি করে খেলোয়াড়দের সুরক্ষিত করার উদ্যোগে যে পরিমাণ পরিশ্রম দরকার, তা মুম্বাইয়ের মতো শহরে আয়োজন করতে অনেকটাই সুবিধে হত আয়োজকদের। এমনটাই জানিয়েছিলেন আদিত্য ভার্মা। গত মাসে এই বিষয়ে বিসিসিআইকে চিঠিও পাঠান তিনি। তবে সেই বিষয়ে কর্ণপাত করেনি বিসিসিআই।
তবে আইপিএল শুরুর আগেই চেন্নাইয়ের খেলোয়াড় ও ম্যানেজমেন্ট স্টাফের ১১ জনের করোনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। একদিক থেকে যা সত্যিই উদ্বেগের কারণ। তাঁদের মধ্যে অনেকের রিপোর্ট আবার নেগেটিভও এসেছে সম্প্রতি। খেলার আগে তাঁদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ‘কার্ডিয়াক স্ট্রেস টেস্ট’। ভাইরাসের থেকে মুক্তি পাওয়ার পরেও হৃদযন্ত্র এবং ফুসফুসে কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা তা দেখার জন্যই এই ব্যবস্থা।
তবে বিশেষজ্ঞের একাংশ জানাচ্ছেন, ‘কার্ডিয়াক স্ট্রেস টেস্টও’ যথেষ্ট নয় খেলোয়াড়দের পরিস্থিতি বোঝার জন্য। মরুদেশের উচ্চ তাপমাত্রা এবং এই ধরণের টুর্নামেন্টের হাই-প্রেসার বড়ো প্রভাব ফেলতে পারে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যে। ভারতকে ২০১১ বিশ্বকাপ এনে দেওয়া কোচ রামজি শ্রীনাবাসনের মতামতও অনেকটাই একইরকম। তিনিও জানাচ্ছেন, স্ট্রেস টেস্টে পালমোনারি লেভেল অনেকক্ষেত্রেই বেশি পাওয়া যায় না। তবে পরবর্তীতে তা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির তৈরি করতে পারে। টেস্ট নেগেটিভ আসার পরেও ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা জানাচ্ছেন করোনা ছেড়ে যাওয়ার পর ঠিক কী কী ধরণের সমস্যা বাসা বাঁধে শরীরে, তার প্রকৃত রেখাচিত্র এখনও অজানা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, উপসর্গহীন মানুষদের সেরে ওঠার পরেও হঠাৎ হৃদযন্ত্রে প্রদাহের মতো ঘটনাও ঘটেছে। মায়োকার্ডিটিসের কারণে ৮ শতাংশের মৃত্যুও হয়েছে আকস্মিকভাবে। সেদিক থেকে জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নই কি উঠে আসছে না খেলোয়াড়দের সামনে?
আরও পড়ুন
ঠিক হল আইপিএলের সময়সূচি, সেপ্টেম্বরেই শুরু টুর্নামেন্ট
মে মাসের শুরু থেকেই সংক্রমণের জন্য ধীরে ধীরে পিছিয়েছে আইপিএলের ক্রীড়াসূচি। তখনও ভারতের সংক্রমণ এই ধরণের চেহারা নেয়নি। তার এত মাস পরে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও কেন এই টুর্নামেন্টের আয়োজন তাই এখনও প্রশ্নের মুখে। দুবাইয়ের বৃহত্তম ইভেন্টগুলির মধ্যে একটি ‘রাগবি সেভেন’ করোনা পরিস্থিতির জন্য বাতিল করা হয়েছে আগস্ট মাসেই। কিন্তু তাও ভারত দেশের বাইরে প্রতিযোগিতা আয়োজনের সাহস দেখাচ্ছে কীসের ভিত্তিতে, উঠছে প্রশ্ন। তা কি শুধুই অর্থনীতিকে লক্ষ্য করেই?
আইপিএলে অর্থনীতিকে সচল করবে অনেকটাই, তা বলাই বাহুল্য। এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের পিছনে বড়ো ভূমিকা রয়েছে স্পনসরদের। কিন্তু সেই সচলতা কতটা প্রভাব ফেলবে ভারতীয় অর্থনীতিতে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যায়।
তবে এর মধ্যেই বড়ো আয়ের মুখোমুখি হতে চলেছে দেশের টেলিকম সংস্থা এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলি। জিও এবং এয়ারটেল ইতিমধ্যেই গাঁটছড়া বেঁধেছে হটস্টারের সঙ্গে। শুধুমাত্র আইপিএল দেখার জন্যই একবছরের টাকা ভরতে হবে দর্শকদের। সূচি ঘোষণার পরেই ৩৯৯ ও ১৪৯৯ টাকার দুটি প্যাকেজ ঠিক করে দিয়েছে ডিজনি হটস্টার। ফলে দীর্ঘদিন পর ক্রিকেটের স্বাদপূরণ যে খুব সহজসাধ্য ও সুখকর হতে যাচ্ছে না দর্শকদের কাছে, তারই একটা স্পষ্ট আভাস। তবুও মানুষের মধ্যে উত্তেজনা তো রয়েছেই এত বড় মাত্রার টুর্নামেন্ট নিয়ে। ৫৩ দিনের এই ক্রিকেট সফরে কী ঘটতে চলেছে আগামীদিনে তার-ই প্রতীক্ষা এখন...
আরও পড়ুন
আইপিএল-এ স্থগিতাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের, এ-বছরের জন্য বাতিল টুর্নামেন্ট?
Powered by Froala Editor