গত ২৪ তারিখ থেকেই টোকিওতে শুরু হয়ে গেছে প্যারালিম্পিকের মহারণ। আর সেই মঞ্চে আগামীকাল থেকে লড়াই করতে নামছে ভারত। ভারতীয় দলের ৫৪ জন অ্যাথলিটদের মধ্যে সেখানে রয়েছেন এক বঙ্গতনয়াও। বসিরহাটের কন্যা সাকিনা খাতুন। ৩২ বছর বয়সী সাকিনা শুধু বাংলাই নয়, বরং সমগ্র ভারতের প্রথম প্যারা-পাওয়ারলিফটার। ভারোত্তলনে পদকজয়ের অন্যতম দাবিদার এবার তিনিই।
তবে খুব একটা সহজ ছিল না এই যাত্রাপথ। বাবা ছিলেন বসিরহাটের সামান্য এক কৃষক। আর্থিক অনটন ছিল পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে সাকিনার শৈশব কেটেছিল আর পাঁচটা সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর মতোই। তারপরই গতিপথ বদল করে জীবন। পোলিওতে আক্রান্ত হন সাকিনা। পরিবারের বিচক্ষণতা আর সচেতনতার অভাবে পোলিও-র টিকাই খাওয়ানো হয়নি তাঁকে। তখন কতই বা বয়স তাঁর? বছর সাতেক বড়োজোর। লড়াইয়ের শুরু সেই থেকেই।
সাকিনার শরীরে যে জাল বিছিয়েছিল পোলিও— তা যখন নজরে আসে পরিবারের, তখন দেরি হয়ে গেছে অনেকটাই। আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে সরকারি হাসপাতালেই শুরু হয় সাকিনার চিকিৎসা। তবে সব মিলিয়ে চার বার অস্ত্রোপচারের পরেও লাভ হয়নি খুব একটা। পায়ের পেশি শিথিল থেকে যায় আগের মতোই। কিন্তু এত কিছুর পরেও হাল ছাড়েননি সাকিনা। বরং, জীবনের মূলস্রোতে ফিরতে দামাল তরুণী বেছে নিয়েছিলেন সাঁতারকে।
কিন্তু চেষ্টা করেও সাঁতার নিয়ে খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি সাকিনা। জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই থেমে যায় তাঁর যাত্রাপথ। তারপরই যেন ম্যাজিক খেলে যায় সাকিনার জীবনে। তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় ভারতের কিংবদন্তি পাওয়ার লিফটার ফারমান বাশার। তাঁর তত্ত্বাবধানেই নতুন জীবন পায় সাকিনা। ২০১০ সালের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়ার পর বাংলা ছেড়ে কর্ণাটকে রওয়ানা দেন সাকিনা। শুরু হয় ভারোত্তলনের প্রস্তুতি। সেইসঙ্গে পায়ের জোর বাড়াতে সমান তালেই চলত সাঁতার।
আরও পড়ুন
বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের নিয়েই প্যারালিম্পিকের পরিকল্পনা, আয়োজনে এক চিকিৎসক!
মাত্র চার বছরের মধ্যে বড়ো সাফল্য পান সাকিনা। ২০১৪-র কমনওয়েলথ গেমসে প্যারা-বিভাগে ৬১ কেজি ডিভিশনে ভারতকে ব্রোঞ্জ পদক এনে দেন তিনি। ২০১৮ সালে এশিয়ান প্যারা গেমসে পান রৌপ্য পদক। বর্তমানে প্যারা-অ্যাথলেটিক্সে ভারোত্তলনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সাকিনা। ফলত, টোকিও-তে তাঁর পদকজয়ের সম্ভাবনা প্রবল। এখন দেখার মীরাবাঈ চানুর সাফল্যের পুনরাবৃত্তি হয় কিনা টোকিওতে। তবে পদক আসুক আর না-ই আসুক, সাকিনার এই লড়াই, অদম্য জেদই যেন নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে ইচ্ছাশক্তির কাছে অসম্ভব নয় কিছুই।
আরও পড়ুন
নিজেরই বিশ্বরেকর্ড ভেঙে টোকিও প্যারালিম্পিকে দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া
Powered by Froala Editor