আয়তনে বড়োজোর এগারো ইঞ্চি। তবে সে শাঁখের গায়ে সূক্ষ্ম কারুকাজ দেখলে বিস্ময় জন্মাতে বাধ্য যে কারোর মনে। কারণ, ওইটুকু শঙ্খের ওপরেই যেন ফুটে উঠেছে মহাভারতের আস্ত এক অধ্যায়। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ। কী নেই সেখানে? কৃষ্ণ-অর্জুনের রথযাত্রা, কর্ণের রথের চাকার মেদিনীগ্রাস থেকে শুরু করে কৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন, অশ্বত্থামা বধ, ভীম-দুর্যোধনের গদাযুদ্ধ— সবকিছুই নিপুণ দক্ষতায় খোদাই করেছেন শিল্পী।
সম্প্রতি এই বিস্ময়কর কারুকার্য সম্বলিত শঙ্খের দৌলতেই বাঁকুড়ার মুকুটে জুড়ল আরও একটি জাতীয় পুরস্কারের পালক। এর আগে নারকেল মালা, পাথর, টেরাকোটা, ডোকরা শিল্প-সহ একাধিক কুটিরশিল্পে জাতীয় পুরস্কার এসেছে বাঁকুড়ায়। এবার শঙ্খশিল্পী বাবলু নন্দীর সৌজন্যে আরও একবার জাতীয় স্তরের শিল্পচর্চায় উঠে এল বাংলার নাম।
বাঁকুড়ার ইন্দপুর ব্লকের হাটগ্রামের বাসিন্দা বাবলু নন্দীর পূর্বপুরুষরাও জড়িত ছিলেন শঙ্খ শিল্পের সঙ্গে। তবে সরাসরি শাঁখের ওপর নকশা নয়, বরং শাঁখা তৈরির কাজ করতেন তাঁরা। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের থেকেই অল্পবিস্তর সেই শিল্পকলা, কারুকাজ শিখেছিলেন তিনি। পরে পুরুলিয়ার মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করার পর পরিবারের সেই শিল্পকেই জীবিকা হিসাবে বেছে নেন। তবে শাঁখার ব্যবসায় পা দেননি বাবলু নন্দী। বরং, আস্ত শাঁখের ওপরেই শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলতে উদ্যোগী হন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বিখ্যাত শঙ্খ খোদাই শিল্পী সুবোধ দত্তের থেকে তালিম নেন শঙ্খশিল্পের।
তবে বাঁকুড়ার অন্য শঙ্খশিল্পীদের থেকে তাঁর খোদাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁর কাজ যেন এক স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। মূলত পৌরাণিক বিভিন্ন কাহিনিকেই শাঁখের ওপর নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলেন বাবলু। এর আগে একাধিক রাজ্যস্তরের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তাছাড়াও বাংলার একাধিক শিল্প প্রদর্শনীতেও জায়গা পেয়েছে তাঁর হাতের কাজ। ২০১৯ সালে একটি মাত্র শঙ্খের ওপরে আলাদা আলাদা প্যানেল তৈরি করে কুরুক্ষেত্রের সম্পূর্ণ ছবি ফুটিয়ে তোলেন তিনি। তবে বিক্রি না করে, আগ্রহের বশেই সেই শাঁখ কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকে পাঠিয়েছিলেন। সম্প্রতি, অবসান হয় সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার! তাঁর এই কৃতিত্বে উচ্ছ্বসিত বাঁকুড়ার গোটা শিল্পীমহল…
আরও পড়ুন
নেলসন ম্যান্ডেলা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন কুমার শানু
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জাতীয় যুব পুরস্কার থেকে বঞ্চিত পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্যের প্রার্থী