কাঁধে দু-দুটো ব্যাগ। হাতেও রয়েছে ব্যাগ ভর্তি বই। মলিন, ক্ষয়ে যাওয়া জুতো পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্টল থেকে স্টলে। সঙ্গে, নিজের লেখা কিছু বই। যদি কেউ রাখেন এগুলো, যদি কেউ কেনেন— এই আশাতেই ঘুরে বেড়ান তিনি। তাঁর এই অবস্থা দেখে কেউ হয়তো জানতেও পারবে না, এই বৃদ্ধ মানুষটিই বিজ্ঞানের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। দেশের বিজ্ঞানচর্চায় অবদান রেখে চলেছেন…
বাংলাদেশ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় উঠে এল এমনই একটি দৃশ্য। উঠে এলেন ডঃ ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকি। মেলায় ঘুরে ঘুরে বই ফেরি করলেও তাঁর আসল পরিচয় একজন বিজ্ঞানী হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন নিউক্লিয় গবেষণার কাজ। একসময় বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া’র সহকর্মীও ছিলেন। কাজের সূত্রে ঘুরে বেরিয়েছেন তেহরান, জাপান, চিন, রাশিয়ায়। এখনও থামেনি তাঁর কাজ। তারই মধ্যে নিজের বই বিক্রির জন্য হাজির হয়েছেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। না, কোনো বড় প্রকাশনা সংস্থার দ্বারস্থ হননি কেমব্রিজের এই প্রাক্তনী। ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ঝড়ও তোলেননি। নীরবেই সব জায়গায় যাচ্ছেন ফয়জুর সাহেব। লাভ নয়, বইয়ের খরচটুকু যাতে উঠে আসে- এটাই তাঁর সব।
রবিবার শেষ হল কলকাতা বইমেলা। বাংলাদেশে গোটা ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে চলবে এই একুশে গ্রন্থমেলা। জায়গা বা নাম আলাদা হতে পারে; কিন্তু চরিত্রগুলো একই থেকে যায়। ফয়জুর রহমান সিদ্দিকি’র মতো আরও অনেক মানুষ ঘুরে বেড়ান মেলা চত্বর জুড়ে। তাঁদের কারোর হাতে হয়ত থাকে তাক লাগানো সব কাজ, লেখা। কিন্তু আমরা, অর্থাৎ পাঠক কি খুঁজে নিই তাঁকে? মলিন বেশে তাঁরা ঘুরে বেড়ান। ঘন ঘন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার, বা বড় হাউজগুলোর দাপাদাপি— এরাও থাকে সব সময়। সেখানে ভিড়ও থাকে। আর সেসবের বাইরে, নীরবে যাপন করে যান এই মানুষগুলো। দলের বাইরে গিয়ে, একা একা বাঁচার চেষ্টা করেন তাঁরা।