‘এখন কিশোর কোনো কথা বলে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। আমি বলি কী ভাবো, বলে কিছু না, পুরানো কথা মনে পড়ে আর ঈশ্বরকে বলি আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও, বেশি কষ্ট দিও না।’
কথাগুলো আজ দুপুরে ফেসবুকে লিখেছিলেন এন্ড্রু কিশোর স্ত্রী লিপিকা। শিল্পীর মৃত্যু তখন আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। এর আগেও অবশ্য অনেকবার এমন গুজব শোনা গিয়েছে যে, এন্ড্রু কিশোর আর জীবিত নেই। শিল্পীর মতোই আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁর ভক্তরাও। দীর্ঘ ৯ মাস সিঙ্গাপুরে থেকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরেও সুস্থ না হতে পারায় মানসিক অবস্থা ভেঙে পড়েছিল। জুন মাসে মরণাপন্ন অবস্থাতেই বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। আর তার পর থেকে রাজশাহীতে বোনের বাড়িতেই ছিলেন। অবশেষে আজ ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬:৫৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় আলম খানের সুরারোপিত একটি গান দিয়ে যাত্রা শুরু এন্ড্রু কিশোরের। তারপর আর কেরিয়ারের জন্য পিছনের দিকে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সিনেমায় প্লে-ব্যাক করতে করতে কখন যেন তিনিই হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের সিনেমা ও সংগীত জগতের সবচেয়ে বড় মাইল-স্টোন। আটবারের জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। সেইসঙ্গে পেয়েছেন আরও অসংখ্য সম্মান ও পুরস্কার। আর শ্রোতাদের ভালোবাসার কথা তো বলাই বাহুল্য। দীর্ঘদিন তাঁর গান ছাড়া বাংলাদেশের কোনো জনপ্রিয় সিনেমার কথা যেন ভাবাই যেত না। একাধিক প্রজন্মকে নিজের সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি। আজ হঠাৎ তাঁর চলে যাওয়ায় যেন অনেকটা জায়গা হঠাৎ শূন্য হয়ে গেল। কোথাও একটা কিছু ছিল, কিন্তু আর নেই।
বিগত এক বছরের উপর সময় ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন সেই শিল্পী। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে থেকেছেন দীর্ঘ ৯ মাস। সেখানেও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় গত ১১ জুন বাংলাদেশ ফিরে এসে রাজশাহীতে বোনের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। এখানে অবস্থার আবার অবনতি হয়। আজ সকাল থেকেই তাঁর শরীরের অবস্থা ভালো ছিল না। আজ বিকেল ৪টের সময় তাঁকে আইসিইউতেও নেওয়া হয়। কিন্তু কোনোভাবেই শেষ রক্ষা করা যায়নি। অবশ্য শিল্পীর মৃত্যু বোধহয় এত সহজে হয় না। আজও বাংলাদেশের পথে পথে থেকে যাবে 'জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ অথবা ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ গানের সুর। আর তার সঙ্গেই বেঁচে থাকবেন এন্ড্রু কিশোর।
Powered by Froala Editor