মমতাজের প্রতি শাহজাহানের ভালবাসার প্রতীক হিসেবে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাজমহল। ঠিক সেভাবেই শস্যশ্যামল বাংলার আনাচে কানাচে কত কী আশ্চর্য লুকিয়ে আছে, আমরা টেরও পাই না। তবে, সম্প্রতি জানা গেল ভালোবাসার এক আশ্চর্য খবর। চাষের জমিতেও কেউ প্রেমের চিহ্ন বুনে দিতে পারে, কে জানত! তেমনটাই করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের আব্দুল কাদির।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াখবলা গ্রাম। আব্দুলের ঠিকানা এটাই। নিজের চাষের জমিকে সৃজনশীল ভাবে সাজিয়েছেন তিনি। প্রায় ৩৫ শতক জমিতে এক উন্নত শৈল্পিক ভাবনায় চাষ করে গোটা বাংলাদেশের নজর কেড়েছেন হাজী তারা মিঁয়ার দ্বিতীয় সন্তান আব্দুল।
প্রতিদিন এই অভিনব চাষজমি দেখতে ভিড় করে দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ। পাড়াখবলা গ্রামে এক ডিজিটাল ক্লাব 'বন্ধুমহল'-এর উপদেষ্টা আব্দুল। বহুদিন ধরেই তাঁর শখ ছিল কিছু অন্যরকম করার। সঙ্গে ছিল ক্লাবের অন্যান্য সদস্যদের চাহিদাও। এইভাবে একদিন স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া রবি শস্য সর্ষের কথা মাথায় আসে আব্দুলের। সঙ্গে ভাবনা এল, কীভাবে এই শস্যকে সৃষ্টিশীল ভাবে বপন করলে তা ছবির আকার নেবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। 'বন্ধুমহল' ক্লাবের সদস্যদের সাহায্যে প্রায় ৩৫ শতক জমির উপর হাল চাষ করেন। এরপর 'বারী ১৫' প্রজাতির সর্ষের বীজ বপন করেন। আস্তে আস্তে ছবির মতো সুন্দর হয়ে সেজে ওঠে চাষজমি। দুটি নৌকা, বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা ও কয়েকটা ভালোবাসার চিহ্ন তো রয়েইছে, সঙ্গে আব্দুল কাদিরের নাম সমেত সেজে ওঠে 'নকশি কাঁথার মাঠ'। হ্যাঁ ক্লাবের সদস্যরা এই নামই দিয়েছেন চাষজমির।
এই যে জমি জুড়ে নানা চিহ্নের জমায়েত। হৃদয়ের আকারে ছোটো-বড়ো আদল। কেন? উত্তরে যেন নিপাট ভালবাসাই উপচে পড়ে আব্দুলের গলায়।
আব্দুলের একদা প্রেমিকা বর্তমান স্ত্রী মকসুদা বেগম। থাকতেন পাশেরই সোহাগী গ্রামে। কিশোরী মকসুদার সাথে আলাপের পর আব্দুল ও মকসুদার চিঠি আদানপ্রদান হত প্রায়ই। প্রেম হয়। পাশাপাশি চিহ্ন স্বরূপ প্রতিটা চিঠির চার কোণে চারটি ও মাঝে একটি ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দিতেন মকসুদা। মাঝের চিহ্নে লেখা থাকতো দুজনের নামও। কিশোর বয়েসের এই ভাবনাকেই চাষের জমিতে ফুটিয়ে তুলেছেন আব্দুল।
স্ত্রী’র তথা সামগ্রিক নারীদের প্রতি এই সম্মানটুকুকে এই সৃষ্টিশীল ভাবে ফুটিয়ে তোলা এতেই অভিনবত্ব। প্রেমের নিদর্শন হিসেবে যেভাবে চাষজমিকে ব্যবহার করেছেন আব্দুল, তা এক কথায় অনবদ্য।