সিন্ধু, গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, দক্ষিণে নর্মদা ও গোদাবরী— খাদ্য উৎপাদনে প্রাচীনকাল থেকেই শীর্ষস্থানে ছিল ভারতীয় উপমহাদ্বীপের এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ফলে, স্বাধীনতার পর ভারত কিংবা বাংলাদেশের মতো দেশকে খাদ্যদ্রব্য আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়নি সেভাবেই। মূলত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্যই খিদে মেটাত এই উপমহাদ্বীপের মানুষের। তবে প্রযুক্তির দৌলতে দ্রুত এগিয়েছে গোটা বিশ্ব। খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে প্রথমবিশ্বের দেশগুলি। সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিবর্তনের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাত। তবে বিগত কয়েক দশকে এই প্রতিকূলতাকে হারাতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। যা যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের (Bangladesh) খাদ্য উৎপাদনে।
গতকাল ঢাকার অবস্থিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল আয়োজিত হয়েছিল এক বিশেষ কর্মশালা। আয়োজনে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’। ‘হারমোনাইজিং ফুড স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স অফ বাংলাদেশ’ খ্যাত এই আলোচনা ও কর্মশালায় উঠে আসে ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশন’ এবং জাতিসংঘ নির্ধারিত আন্তর্জাতিক খাদ্য কোড অনুযায়ী, খাদ্য গুণমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে ক্রমশ শীর্ষস্থানের দিকে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
বিগত কয়েক বছরে একদিকে যেমন বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যের গুণমান ও পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই আজকের দিনে শুধুমাত্র স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনের ওপরই নির্ভরশীল নয় বাংলাদেশ। প্রয়োজনীয় ও গুণগত খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সমানভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খাদ্যদ্রব্য আমদানিও করা হচ্ছে পূর্ববঙ্গে। চলছে রপ্তানি প্রক্রিয়াও। যা আন্তর্জাতিক খাদ্যমানের সঙ্গে সামঞ্জস্য স্থাপন করার অন্যতম একটি পদক্ষেপ।
বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী এবং খাদ্য-বিশেষজ্ঞ ছাড়াও এদিন হাজির ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশের এই নিঃশব্দ খাদ্যবিপ্লবকে স্বীকৃতি দেন এই প্রতিনিধি দলের প্রধান মাউরিজিও সিয়ানও। খাদ্য নিরাপত্তার বাইরেও, উঠে আসে দেশের মানুষদের পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথাও। অর্থাৎ, সবমিলিয়ে পরিমাণের বদলে খাদ্যের গুণমানের বিষয়টিতেই জোর দেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।
কয়েক দশক আগে, জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রিশন চ্যালেঞ্জ’ প্রকল্পের মাধ্যমে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। গঠিত হয়েছিল উৎপাদিত খাদ্যের গুণমান পর্যবেক্ষণ করার বিশেষ সংস্থা। ২০০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ অংশ নিয়েছিলেন এই কর্মকাণ্ডে। তৈরি হয়েছিল ১১ হাজারের বেশি খাদ্যের গুণমানের খসড়া। বছর দশেক আগে প্রবর্তিত হয় বিশেষ খাদ্য নিরাপত্তা বিধিমালাও। আর তার প্রেক্ষিতেই ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকার ছাড়াও বেসরকারি স্টেকহোল্ডার, একাডেমিয়া এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞরাও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে বলেই জানান বাংলাদেশ খাদ্যমন্ত্রকের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও।
তবে এখানেই থেমে থাকা নয়, আগামীদিনে খাদ্যের মান আরও উন্নত করতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রক। পাশাপাশি খাদ্যশিল্পে রপ্তানি বৃদ্ধির এক নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রতিবেশি রাষ্ট্র। দেখতে গেলে বাংলাদেশের বয়স মাত্র ৫২ বছর। এই স্বল্প সময়েই বাংলাদেশের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এই পদক্ষেপ এক দৃষ্টান্ত বইকি…
Powered by Froala Editor