স্পিনার— ক্রিকেটের দুনিয়ার হ্যারি পটার হয়ে অবতীর্ণ হন এঁরা। কবজি আর আঙুলের মোচড়ে তৈরি করেন কত রূপকথা! যে আশ্চর্য জাদুস্পর্শ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন বিশ্বের সমস্ত ক্রিকেট ভক্তরা। গুগলি হোক বা দুসরা, কিংবা ড্রিফটার— উইকেট ছিটকে যাওয়ার পর ব্যাটসম্যানের হতভম্ব মুখটাই বোধহয় বড়ো পুরস্কার যেকোনো স্পিনারের। তার ওপর তিনি যদি বাঁ-হাতি স্পিনার হন, তাহলে তো আরওই! সেই পথেই পথ চলা শুরু হয়েছিল রামচাঁদ গোয়ালার। তাঁর হাতের জাদু একসময় মুগ্ধ হয়ে দেখত সমস্ত উপমহাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম বাঁ-হাতি স্পিনার অবশেষে চিরবিদায় জানালেন জীবনের ক্রিজকে। গতকাল, শুক্রবার ৭৯ বছর বয়সে ময়মনসিংহে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রেখে গেলেন এক প্রবাহমান ঐতিহ্যকে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিজেদেরকে উন্নত করে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। রফিক থেকে শাকিব— একের পর এক স্পিনার এসেছে টিমে। গোটা বিশ্ব যাঁদের খেলায়, প্রতিভাকে কুর্নিশ জানিয়েছে। সেই রাস্তার শুরুর দিকের পথিক ছিলেন রামচাঁদ গোয়ালা। কিন্তু শুরুর দিকে স্পিন বোলিংয়ের তেমন ইচ্ছা ছিল না। অনেকের মতো তাঁরও আগ্রহ ছিল পেস বোলিংয়ে। দূর থেকে ছুটে আসা বোলার, তাঁর তেজ, দৃপ্ত ভঙ্গি আকর্ষণ করত রামচাঁদকে। একসময় দেখলেন, ওই ছুটে আসায় নয়, তাঁর আসল জাদু রয়েছে আঙুলে। অতঃপর, স্পিন বোলিংয়ের গোলকধাঁধায় প্রবেশ। একে স্পিনার, তাও বাঁ-হাতি; ম্যাজিক যেন বেড়ে গেল এক নিমেষে…
ময়মনসিংহের হয়ে শুরু কেরিয়ার। আবাহনীর হয়েই খেলেছেন ১৫ বছর। জাতীয় দলেও চান্স পেলেন তিনি। তৈরি করলেন ইতিহাস, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে। ৮০-এর দশকে বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। এখনও ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে করতে পারবেন তাঁর সেই বিখ্যাত ডেলিভারি, যার ফল ছিল শ্রীলঙ্কার ক্যাপ্টেন অর্জুন রণতুঙ্গার উইকেট। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম কিংবদন্তি মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। ক্রিকেটটাকে অন্তর থেকে ভালোবাসতেন। বয়সের ভারে শরীর সঙ্গ না দিলেও, প্রতিবার খেলা দেখলে নিজেকেও যেন তারই এক অঙ্গ বলে অনুভব করতেন। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয় দেখেও নিশ্চয়ই খুশি হয়েছিলেন অনেক! সেই রামচাঁদ গোয়ালারই হাতের জাদু থামল এবার। হাত থেকে পড়ে গেল বল। জীবনের ঘূর্ণি পিচে উইকেট হারালেন তিনি।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
‘কোচ’ সুশান্তের সঙ্গে আর দেখা হল না মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ক্রিকেটার দিগ্বিজয়ের